Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের ফাঁদে ফের রোগী ও লাশের স্বজনরা!

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ০৫:০৮:২৯ এম

বিল্লাল হোসেন : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সিন্ডিকেট গঠন করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকদের সমন্বয়ে এই সিন্ডিকেট গঠন করে বাণিজ্য করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের বাইরে রোগী বহনের জন্য কোন অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারেনা। ফলে সরকারি এই হাসপাতাল থেকে রোগী অথবা লাশ নিতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সেখানে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্সে নিতে বাধ্য হচ্ছেন স্বজনরা।
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, তার চাচাতো ভাইকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারেন তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করেন।
মাসুদ জানান, রোগীকে ঢাকায় নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গিয়ে তিনি রীতিমতো বিপাকে পড়েন। তার কাছে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করে হাসপাতালে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা। পরে তিনি তার পরিচিত একজনকে ফোন করলে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ভাড়ার কথা জানান। কিন্তু রোগীকে হাসপাতালের বাইরে থেকে উঠাতে হবে। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তাকে জানানো হয় তাদের অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে প্রবেশ করে রোগী উঠাতে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় বাইরে নিয়ে যেতে নারাজ হন। পরে ১০ হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতালে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে ঢাকায় নিতে বাধ্য হন। যদি তিনি বাইরের অ্যাম্বুলেন্স রোগী নেয়ার সুযোগ পেতেন তাহলে কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে সাশ্রয় হতে পারতেন।
এদিকে, নিজের মেয়ের সাথে কথা কাটাকাটির জেরে আত্মহত্যা করে বাঘারপাড়া উপজেলার ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৪০)। ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে আড়াই হাজার টাকায় তার মৃতদেহ হাসপাতালে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্সে নিতে বাধ্য করা হয় স্বজনদের। জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে প্রতি রোগী ও লাশ নিতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সেখানে অবস্থানরত অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিতে হয়। হাসপাতালে বিপদে পড়া মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে চালকেরা বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিতে এখানে সিন্ডিকেটে গঠন করে বসেছেন। অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালে যত্রতত্র অ্যাম্বুলেন্স রেখে বিভিন্ন ওয়ার্ড, লাশকাটা ঘরসহ জরুরি বিভাগের আশপাশে ঘোরাফেরা করে থাকে খরিদ্দার সংগ্রহের জন্য।
সূত্র জানায়, স্থানীয়রা প্রভাব খাটিয়ে সরকারি হাসপাতালের জায়গা দখলে নিয়ে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড তৈরি করে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে। ওই স্ট্যান্ডে কোনো অ্যাম্বুলেন্স যোগ করতে হলে সিন্ডিকেট প্রধানদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয় এককালীন। টাকা না দিলে ওই স্থানে অ্যাম্বুলেন্স রাখার সুযোগ পায় না কেউ। অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে সিন্ডিকেটের সদস্য ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা লাভবান হচ্ছেন। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কেননা হাসপাতালে বিপদে পড়া মানুষেদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়ার টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসন ও যশোর পুলিশ প্রশাসন জোরালো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঘোষণা দিয়েছে বাইরের কোন অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। সকল রোগী ও লাশ হাসপাতালে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দিনে যশোর জেলা প্রশাসন ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হাসপাতালের ভিতরে গড়ে ওঠা অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড ও দালাল নির্মূলের। এরপর বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কয়েকজন চালককে জরিমানা করার পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে। ওই সময় প্রশাসনের চাপে ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোন অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। সিন্ডিকেটের সদস্যরাও গা ঢাকা দেয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই একে একে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে থাকে হাসপাতালের ভিতরে। বর্তমানে জরুরি বিভাগ ও করোনারি কেয়ার ইউনিটের সামনে আবারো অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বাণিজ্য ভালো হওয়ায় ওই স্ট্যান্ডে ক্রমেই অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়ছে। অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডকে ঘিরেই একটি চক্র চাঁদাবাজিতে মেতে রয়েছেন। প্রতি মাসে টাকা হাতানো হয় চালকদের কাছ থেকে।
ওই চাঁদার টাকা দিতে অনীহা নেই অ্যাম্বুলেন্স চালকদের। কেননা হাসপাতালে ঢুকতে পারলেই তাদের জমজমাট ব্যবসা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, অ্যাম্বুুলেন্স সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা করা অবশ্যই অন্যায় ও অমানবিক। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা তৈরি না করতে কয়েকদিন আগে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সতর্ক দিয়েছেন।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)