বিল্লাল হোসেন: কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগ বলে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে ৩০০ টাকা হারে ফিস আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেনারেল হাসপাতালের সামনে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির অবস্থান। দালালদের মাধ্যমে এমনটি করা হচ্ছে।
ওই প্রতিষ্ঠানটিতে রোগী নিয়ে গেলে কমিশন পায় দালালরা। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় দালালরা নির্বিঘ্নে এটি করে যাচ্ছে। এসব দালালদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল মিটিংয়েও দেখা যায়।
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের চান্দুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, ১০ জুন তিনি স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে জেনারেল হাসপাতালে আসেন। কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার পর হাত কাটা এক ব্যক্তি তাকে বলেন-‘ভাই প্রচণ্ড ভিড়। ডাক্তার দেখাতে কষ্ট হবে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের একটি স্পেশাল কক্ষ আছে। সেখানে চলেন সেখান দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে দেবো। ভুল বুঝিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ডাক্তার দেখানোর নাম করে তার কাছে ৩০০ টাকা ফিস চাওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে ফিস কেনো লাগবে এমন প্রশ্নে দালাল রাগান্বিত হয়।
রফিকুল ইসলাম আরও জানান, দালালের খপ্পরে পড়েছেন বুঝতে পেরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বের হয়ে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে কমটেকে ভাগিয়ে নেয়া দালালের নাম হাতকাটা আসাদ। তিনি কমটেকের দালাল। সকাল ৮টা থেকে তিনি রোগী ভাগানোর কাজে হাসপাতালে অবস্থান করেন।
এনায়েতপুর গ্রামের আমির আলী জানান, মঙ্গলবার সরকারি এই হাসপাতালে বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য এসেছিলেন। টিকিট কাউন্টার থেকে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার পর তিনি এক দালালের খপ্পরে পড়েন। ওই দালাল তার রোগের কথা শুনে বলেনÑ এখানে ডাক্তার ভালো করে দেখবেন না। সামান্য টাকার জন্য কেনো সরকারি এই হাসপাতালে রোগী দেখাবেন। আমার সাথে চলেন তিনশ’ টাকা ফি দিয়ে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দেবো।
তিনি বলেন, সরল মনে তিনি ওই দালালের সাথে হাসপাতালের গা ঘেষে একটি ক্লিনিকে যান। সেখানে ডাক্তার দেখানোর পর বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়। চিকিৎসকের ফি ও পরীক্ষা বাবদ ২২শ’ ৫০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় তার কাছ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, অর্থোপেডিকের কয়েকজন চিকিৎসক সরাসরি দালালিতে নেমেছে। তারা ওয়ার্ড রাউন্ডে এসে রোগীদের বিভিন্ন কথা বলে আতঙ্কগ্রস্ত করে ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যে রোগী যেতে রাজি না হয় নানা অজুহাতে দীর্ঘদিনেও সরকারি এই হাসপাতালে তার অপারেশন করা হয় না।
তিনি আরো জানান, বহির্বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দায়িত্বরত একাধিক কর্মচারী রোগীদের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে পাঠিয়ে দেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর জন্য। বিনিময়ে তারা কমিশনের টাকা পান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, এখানে যোগদানের পর দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়তে নানা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পেশাদার দালালদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হবে।