আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৬:০৩:১৩ পিএম

স্পন্দন ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন বিবেচনায় নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আশা করি, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, জনগণ সেদিকে একটু বিশেষভাবে মনোযোগ দেবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

সোমবার সকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দ্বারা সম্পাদিত ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রমনা পার্কস্থ রমনার বটমূলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্যবৃদ্ধিকরণ এবং মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে এক হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং তারা এটা করেছে শুধু এ কারণেই যে, আমরা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। কাজেই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশ চালিয়ে যাচ্ছি।

সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আমরা ই-গভার্নেন্স চালু করবো, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করবো।

দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা করা সম্ভব হয়েছে এ কারণেই যে, দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় আছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তার সরকার ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনে যাতে একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আসে তার ব্যবস্থাও করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, বরং একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা বা ইন্টারনেট কানেকশন পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে আমরা স্যাটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছি। তাছাড়া ’৯৬ সালে যে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট তা চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি তা আবার তিন হাজারে (মেগাওয়াট) নেমে গেছে। সেখান থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি ঘরকে আমরা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা মানুষকে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের প্রেক্ষিতে বিদুৎ, পানি ও জ¦ালানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য ফের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে প্রায় দেড়শ ভাগ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই আবারো একটু সাশ্রয়ী হবেন।

দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর এবং প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের খাবার উৎপাদন বাড়াই, তবে অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের আঘাত করতে সক্ষম হবে না।

শেখ হাসিনা রাজধানীবাসীর অতীতের পানির কষ্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে সুপেয় পানির বড় অভাব ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই আমরা রাজধানীর সায়েদাবাদ ১, ২ ও ৩সহ বিভিন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো করে দিয়েছি। কাজেই পানির ব্যবহারেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তার সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাই শুধু বাড়ায়নি, তাদের আবাসন সুবিধা ৩২ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর লক্ষ্য ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর এদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে বন্দুকের নল দিয়ে। অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে, ‘মার্শাল ল চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে দেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত হয়েছিল, সেটা ব্যাহত হয়ে যায়। এভাবেই ২১ বছর সরকার পরিচালিত হয়। ফলে মানুষের উন্নয়নের গতিও ব্যাহত হয়। অথচ জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি নয় ভাগের ওপরে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর এই অগ্রগতি থেমে যায়, কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী দিয়ে কখনো দেশের উন্নয়ন হয় না। আর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেই এই জনগণের কিছুটা হলেও উন্নয়ন করতে পেরেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করি। আমাদের যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাংলাদেশ ২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যদি এই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা না থাকতো, তাহলে এদেশ কিন্তু এতো উন্নত হতে পারত না।

সোমবার উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য ২০তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯০টি ফ্ল্যাট), তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বহুতল (১৩তলা) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (ছয়টি ১৩তলা ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট), মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯টি ১০তলা ভবনে ৩২৪টি ফ্ল্যাট)। এছাড়াও রয়েছে ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্যবৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, এনেক্স ভবন এবং অডিটোরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পের অধীনে মিরপুর-৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য এক হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট (স্বপ্ননগর-১) নির্মাণ, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪তলাবিশিষ্ট ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চবিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চবিদ্যালয় ও পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন।