আগাম পেঁয়াজ চাষে কৃষকের ব্যস্ততা

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৬:০৩:৪৪ পিএম

শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা  : মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের ৭ জেলার মধ্যে মাগুরা অন্যতম। এ জেলায় ধান, পাট, সরিষা,গমসহ নানা ধরণের সবজিসহ মসলা জাতীয় ফসলের চাষ বেশি হয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ ও রসুন উৎপাদনে জেলার কৃষকরা এগিয়ে রয়েছে। মাগুরার ৪ উপজেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় এ মসলা জাতীয় ফসল সবচেয়ে ভালো উৎপাদন হয়। এ উপজেলায় পেঁয়াজ ও রসুনের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। পৌষ ও মাঘ মাসে এ উপজেলার কৃষকরা এখন আবাদ পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়,কৃষকরা জমি প্রস্তুত শেষে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পেঁয়াজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শ্রীপুর উপজেলার চরমালাই নগর গ্রামের পেঁয়াজচাষি উত্তম বালা জানান, আমাদের মূলত চাষই পেঁয়াজের। প্রতি বছর বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি আমি পেঁয়াজের চাষই বেশি করি। পেঁয়াজ চাষে পরিশ্রম কম। লাভ বেশি। পেঁয়াজ রোপণের পরপরই নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যা ও  ঠিকমতো সার-ঔষধ দিলে পেঁয়াজের ফলন ভালো হবে। তবে ভালো পেঁয়াজ হলে হলে ভালো জাতের বীজের কোনো বিকল্প নেই। চলতি মৌসুসে আমি ৬৫ শতক জমিতে দেশি পেঁয়াজের আবাদ করেছি। যদি আবহাওয়া অনুুকূলে থাকে তবে ফসল ভালো পাব। এবার এ চাষে আমার উৎপাদন খরচ হয়েছে ৫০ হাজার। গত বছর প্রতি শতকে দেড় মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলাম। এবার ভালো উৎপাদন হবে। সব খরচ বাদে গত বছর ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা লাভ ছিল। এবার আশারাখি বেশি হবে। 

শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের চাষি শামীম মোল্যা জানান, আমি এবার ২৫ শতক জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছি। এ চাষের জন্য ভালো বীজের প্রয়োজন। কিন্তু বাজারে প্রচলিত বীজ তেমন ভালো নয়। বর্তমানে আমার ১৫ শতকে পেঁয়াজ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ১০ শতকে পেঁয়াজ রোপণের কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা রাখি মাঘ মাসের মধ্যে চাষ শেষ হবে।

মাগুরা সদরের ছয়চার গ্রামের চাষি শফিকুল ইসলাম জানান,আমি এবার ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছি। এ চাষের জমির মাটি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ভালো বীজের প্রয়োজন। তাছাড়া আমি শ্রীপুরের ঘসিয়াল ও চতুরিয়া গ্রামে এ চাষ করেছি। গত বছর এ চাষে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। এবার আশারাখি ভালো ফলন পাব।

মাগুরা কৃষি বিভাগ বলছে,জেলার ৪ উপজেলায় মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শ্রীপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ বেশি হয়। এ উপজেলার চাষীরা বর্তমানে আগাম এ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার জেলায় ৮ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সদরে ৮ শত ৯০ হেক্টর,শ্রীপুরে ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর,শালিখায় ৫ শত ৭০ হেক্টর ও মহম্মদপুরে ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে এ চাষ হয়েছে। এবার  এ চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৯৮০ হেক্টর। চলতি বছর আবহাওয়া ভালো হলে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা জানান,জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে শ্রীপুরে বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়। চলতি বছর এ উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভালো হয়েছে। বর্তমানে চলছে দেশি পেঁয়াজ রোপণের কাজ। কিছুদিন আগে ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহের কারণে কিছু কিছু ক্ষেতের একটু সমস্যা হয়েছে। আমরা কৃষকদের এ চাষের মান বৃদ্ধিতে  জন্য যথাযথ পরামর্শ প্রদান করছি। আশারাখি এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হবে। ইতি মধ্যে শ্রীপুরে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কৃষি বিপনন এর আয়োজনে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণাগার নির্মাণের কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এ উপজেলার কৃষকরা যাতে পেঁয়াজ-রসুন যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করতে পারে সেজন্য সরকারের এ উদ্যোগ। এ উপজেলায় ১৫টি পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে। উপজেলার চাষীরা আধৃনিক পদ্ধতি এখন পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণ করতে পারবে।