যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে অত্যাধুনিক এক্সরে ও কালার আল্ট্রাসনো মেশিন অকোজো

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:২০:১৯ পিএম

 

বিল্লাল হোসেন: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন ও কালার আল্ট্রাসনো মেশিন অকোজো হয়ে আছে। সরকার থেকে বরাদ্দ সিমেন্স কোম্পানির ৭৫০ এম এ মেশিনটির দাম কোটি টাকার বেশি। আর কালান আল্ট্রাসনো মেশিনটি হলো অনুদানের। মেশিন দুটি সচল করা হলে রোগীরা উপকৃত হবে।  

জানা গেছে, বিগত ২০০৯ সালে সরকারি এই হাসপাতালে রোগীদের সুবিধার্থে  বরাদ্দ মেলে সিমেন্স কোম্পানির অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিনটি। রোগীর শরীরে কোনো স্থানে আঘাত কিংবা কোথায় হাঁড়ভাঙা তা এক্স-রে করার সময় এই মেশিনে সরাসরি ছবি দেখা যায়। এজন্য এটিকে ‘ফ্লোস কপি এক্স-রে মেশিন বলা হয়ে থাকে। এই মেশিনে রোগীর আঘাত শনাক্ত করার সময় কোনো ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসক এক্সরে করার সময় খুব সহজে আঘাত শনাক্ত করতে পারে। বরাদ্দের দুই বছর টানা কার্যক্রম চলে। ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে মেশিন অকেজো হয়ে যায়। ফলে আধুনিক এক্স-রে মেশিনের সেবা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হতে থাকে। ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। তার জোর তাগিদায় ২০১৯ সালে মেশিন ফের সচল হয়। কয়েক মাস কার্যক্রম চলার পর ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে মেশিনটি আবারও অকেজো হয়ে যায়। সেই থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু ডিজিটাল মেশিনে এক্স-রে সুবিধা পাচ্ছে রোগীরা। গত ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন উদ্বোধন করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য। ফলে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের কার্যক্রম চালু থাকায় রোগীরা অনেকটা সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু রোগীর চাপে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডিজিটাল মেশিনের সাথে সিমেন্স কোম্পানির ওই মেশিনটি সচল থাকলে রোগীর সাথে দায়িত্বরত কর্মচারীদের সুবিধা হতো। এখন এক মেশিনে কার্যক্রম চলার কারণে রোগীর ভিড়ে বেগ পেতে হয়।

এদিকে, ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর এদিকে তুরস্ক সরকার সরকার পরিচালিত তুর্কি ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (টিকা) এ হাসপাতালে ১৯ ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি অনুদান হিসেবে দেয়। যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিলো একটি থ্রিডি কালার আল্ট্রাসনো মেশিন। তখনকার সময়ের তত্ত্বাবধায়ক ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর অনুদানের মেশিন ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় পত্রটির ফাইল পাঠিয়ে দেয় কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের অফিসে। সেখান থেকে ওই মেশিন ব্যবহারের অনুমতি না দিয়ে আবেদনপত্রটি ফেরত পাঠানো হয়। মেশিনগুলো ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ৩০ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে লিখিত আবেদন পাঠানোর পর মেলে অনুমোদন। পরে ২০১৮ সালের কালার আল্ট্রাসনো মেশিনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস পরেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে চালু করে কালার পেপার বরাদ্দ না থাকায় সাদাকালো আল্ট্রাসনো করা হচ্ছিলো। কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে কালার আল্ট্রাসনো মেশিনটি অকোজো হয়ে যায়।

হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফার) মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, এক্সরে ও কালার আল্ট্রাসনো মেশিন অকোজো হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবগত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এক্স-রে মেশিন সচল করার জন্য নিমিউ এন্ড টিসির চীফ টেকনিক্যাল ম্যানেজারকে মুঠোফোনে বারংবার কল করলেও তিনি আমলে নিচ্ছেন না। 

রেডিওলজিস্ট বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু সাঈদ জানান, আল্ট্রাসনো বিভাগে তিনি ছাড়াও একজন মেডিকেল অফিসার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। সকল রোগীকে আন্তরিকতার সাথে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করা হয়। ফলে সরকারি এই হাসপাতালের আল্ট্রাসনো রিপোর্টের মান অনেক ভালো। কালার আল্ট্রাসনো মেশিন সচল হলে রোগীদের আরও সুবিধা হবে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নয়নে বদলে গেছে হাসপাতালের সার্বিক চিত্র। বর্তমানে কোন কোন চিকিৎসা সরঞ্জাম অকোজো অবস্থায় আছে সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। সেগুলো সচল করার জন্য সকল কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।