জনবল সংকটে ধুকছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৮:৪৬:০৫ পিএম

বিল্লাল হোসেন : শূন্যপদ পূরণসহ পদ সৃষ্টির জন্য চাহিদাপত্র পাঠানোর পর ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে শুন্য থাকা পদগুলো পূরণ হয়নি। সৃষ্টিও হয়নি চাহিদার বিপরীতে চিকিৎসক, সেবা তত্ত্বাবধায়ক, সেবিকা ও কর্মচারীর পদ। এতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।

হাসপাতাটির ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, নতুন পদ সৃষ্টি ও শূন্য পদগুলো পূরণের ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসকের মোট পদ ৫৪ টি। কর্মরত আছেন ৪৯ জন। শূন্য রয়েছে ৫ চিকিৎসকের পদ। এরমধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদ ৩টি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ ২টি। এতো স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কেননা, শয্যার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী এখানে ভর্তি থাকেন। প্রতিদিন গড়ে সরকারি এই হাসপাতালে ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা  গ্রহণ করছেন। ফলে লোকবল সংকটে চিকিৎসা কার্যক্রমে দায়িত্বরতদের রীতিমতো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৬০ জন চিকিৎসক, ১ জন উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক, ১শ জন সেবিকা ও ১৬৫ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীর নতুন পদ সৃষ্টির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ হলো, ১ জন তত্ত্বাবধায়ক, ১ জন সহকারী পরিচালক, গাইনী বিভাগের ২জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, নিউরো সার্জারী বিভাগের ২ জন  সিনিয়র কনসালটেন্ট,  মেডিসিন বিভাগের ২ জন  সিনিয়র কনসালটেন্ট, নাক কান ও গলা বিভাগের ২ জন  সিনিয়র কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগের ২ জন  সিনিয়র কনসালটেন্ট, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ২ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট,  নিউরো মেডিসিন বিভাগের ১ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, ইউরোলজি  বিভাগের ১ জন  সিনিয়র কনসালটেন্ট,  নাক কান গলা বিভাগের ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিক বিভাগের ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, চক্ষু বিভাগের ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, জেনারেল সার্জারী বিভাগের ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, নিউরো সার্জারী বিভাগের ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, নিউরো মেডিসিন বিভাগের ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, আবাসিক চিকিৎসক ১ জন ও অ্যানেসথেসিয়া ৩ জন। কিন্তু আজ অবধি পদ সৃষ্টি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিকেল অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের মারাত্মক সংকট রয়েছে। ফলে রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে তাদের স্থলে দায়িত্ব পালন করছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এছাড়া প্রশাসনিক পদে জোড়াতালি দিয়ে কার্যকম চলছে। একজনের দায়িত্ব পালন করছেন আরেকজন। আবার কেউ কেউ একসাথে একাই দুই রকমের দায়িত্ব পালন করছেন।

হাসপাতালের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, বর্তমানে হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে জনবল সংকট। কর্মরতদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় রীতিমতো হাফিয়ে ওঠার মতো অবস্থা। কষ্ট হলেও চিকিৎসক সেবিকারা আন্তরিকতার সাথে রোগীদের দেখভাল করেন। এরপরেও কোনো রোগীর চিকিৎসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়রানী ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কিনা তদারকির জন্য তিনি সকাল ও রাতে প্রতিটি ওয়ার্ড রাউন্ডে যান। চিকিৎসক-সেবিকারা বাড়তি দায়িত্ব পালন করলেও কোনো রোগীর সাথে খারাপ আচরণ করেন না।

ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান আরও জানান, শূন্য পদ পূরণ ও নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে চাহিদাপত্র পাঠানোর পরও তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। খুব শিগগিরি হয়তো এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে হাসান আল মামুনকে তত্ত্বাবধায়ক (উন্নয়ন) পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে আর কেউ ওই পদে আসেননি। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উন্নয়নের তত্ত্বাবধায়ক পদটি বিলুপ্ত করে। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।