নড়াইলে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত

আ.লীগ নেতা সেই শিক্ষককে অব্যাহতি, তদন্ত প্রতিবেদন আজ

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৭:২২:০৬ এম

ফরহাদ খান, নড়াইল : নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা দেয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকতার হোসেন টিংকুকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সাক্ষরিত চিঠিতে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামি তিনদিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মশিয়ার রহমানকে সভাপতির দায়িত্ব¡ দেয়া হয়েছে। 
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আকতার হোসেন টিংকু বলেন, ঘটনার দিন আমি সব সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। উদ্দেশ্যমূলক আমাকে দায়ী করা হচ্ছে। 
এদিকে, ৩০ জুন সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাকে (আকতার হোসেন) কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা যাচ্ছে যে, গত ১৮ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রের মোবাইলে (ফেসবুক) স্ট্যাটাস নিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। আপনি (আকতার হোসেন) উক্ত কলেজের একজন শিক্ষক এবং ভিডিওফুটেজে দেখা যায় আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আপনার উপস্থিতিতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে বের করে আনা হয়। যা নিন্দনীয়, শিক্ষক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার সামিল। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবরে আপনাকে জড়িত করে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। সে কারণে আপনি এ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আমরা মনে করি আপনি, সভাপতি হিসেবে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। 
উপরোক্ত কারণে আপনাকে এই পত্র পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে লিখিত কারণ দর্শাতে বলা গেল। ৩০ জুন থেকে ইউয়িন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হলো। ইউনিয়নের সহসভাপতি মশিয়ার রহমানকে দায়িত্ব¡ দেয়া গেল। 
অন্যদিকে, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন শনিবার (২ জুলাই) দেয়ার কথা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী। অপরদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের অপর তদন্ত টিম কাজ করছে। 
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মুছেননি রাহুল। 
শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন। 
এদিকে, অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ জনতা ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতারমালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান।