ভয়াল আইলার আজ ১৩ বছর পূর্তি

ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দাকোপের আইলা ক্ষতিগ্রস্তরা

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:০৬:২৮ পিএম

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ (খুলনা): ভয়াল আইলার আজ ১৩ তম বর্ষপূর্তি। ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দাকোপের আইলা ক্ষতিগ্রস্ত দুই ইউনিয়নের মানুষ। অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগে বেহাল অবস্থা, খাবার পানির তীব্র সংকট আর কর্মসংস্থানের অভাবে অধিকাংশ মানুষ এলাকা ছাড়া।

২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের দু’টি ইউনিয়ন। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের অর্ধ লাখ মানুষ। গৃহহারা মানুষের ঠাঁই হয় বেড়িবাঁধের উপর। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে নানামুখি উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় বাঁধ। দীর্ঘ ২১ মাস পর পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ঘরে ফিরে যায় তারা। তবে নদী ভাঙনে ভিটে হারা ভূমিহীন অনেক পরিবার ঘরে ফিরতে পারেনি। তখন সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তায় ছিল তাদের বেঁচে থাকার ভরসা। গত ১৩ বছরে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরনের ত্রাণ সহায়তা। কিন্তু সেখানকার জনসাধারণ এখনও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ওই এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস নদী থেকে চিংড়ি পোনা ও বনজ সম্পদ আহরণ। বর্তমানে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। আর বনজ সম্পদ আহরণ অনেকাংশে কমে এসেছে। কর্মহীন মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন শহরে শ্রম বিক্রি করছে। সুতারখালীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোন্তাজ আলী সানা বলেন, এলাকাবাসীর অন্যতম সমস্যা জীবন ধারনে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। আমরা বাধ্য হয়ে পুকুরের অনিরাপদ পানি পান করে থাকি। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। মানসম্মত জীবন ব্যবস্থার কিছুই নেই আইলা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। কামারখোলা ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের নদী তীরে বসবাসকারী ইমরান গাজী বলেন, শত বাধা পেরিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কৃষি কাজে মনযোগী হই। কিন্তু সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমের মজুরি। বাজার অব্যবস্থাপনার জন্য এবার চাষিরা নিঃস্ব হয়ে গেছে। সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্ত ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় সেই বাঁধ ও হুমকির মুখে। বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না হওয়া পর্যন্ত চিংড়ি পোনা আহরনে আইনের শিথিলতার দাবি করেছেন।

কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল বলেন, অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই দু’টি ইউনিয়নে বিশেষ বরাদ্দ দরকার। পাশাপাশি তরমুজসহ কৃষি কাজে চাষিদের লাভবান করতে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন দরকার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ্বাস বলেন, সরকার গৃহহীনদের পূর্নবাসনে জায়গাসহ ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। পাশাপাশি রাস্তা ঘাটের উন্নয়নে স্থানীয় চাহিদাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পানীয় জলের সংকট নিরসনে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে পানি সংরক্ষণে ট্যাংকি বিতরণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া কৃষির উন্নয়নের জন্য খাল খননসহ সেচ পানির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আইলার ১৩ তম বর্ষ পূর্তিতে দাকোপের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কর্মসংস্থান, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন এবং পানীয় জলের সংকট নিরসনে সরকারের বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে।