আপাতত হিজাব পরে ক্লাসে নয়, বললো ভারতের আদালত

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:০১:১০ এম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব অনুমোদন পাবে কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আসার আগ পর্যন্ত ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের শিক্ষার্থীদের আপাতত ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাসে না যাওয়ার জন্য বলেছে দেশটির একটি আদালত।
শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখছে কর্ণাটক; পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষকে কয়েকদিনের জন্য রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশও দিতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে কর্ণাটক হাই কোর্টের দেওয়া ‘হিজাব না পরে ক্লাসে ফেরার’ নির্দেশনায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো হতাশা প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
আদালতের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদেরকে কয়েকদিনের জন্য তাদের ‘ধর্মবিশ্বাস স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে’, বলেছে একটি সংগঠন।
গত মাসে রাজ্যটির উডুপির সরকারি গার্লস পিউ কলেজের ছয় শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, হিজাব পরার জন্য ক্লাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের।। পরে এসব ছাত্রী কলেজে আসলেও তাদের ক্লাসে ঢুকতে না দিয়ে পৃথক একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। ক্লাস কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে রাজ্যটিতে হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
কর্ণাটকের বিজেপি সরকারও হিজাব নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জানিয়ে আদেশ জারি করে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, উডুপি ও চিক্কামাগালুরু এলাকার হিন্দু ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো ক্লাসে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরায় আপত্তি তোলে। এরপর গত সপ্তাহে কিছু শিক্ষার্থী হিন্দুত্ববাদীদের প্রতীক গেরুয়া রঙের উত্তরীয় পরে তাদের কলেজে মিছিল করে।
এর মধ্যে মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ি হওয়ার পর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। এরমধ্যে একটি কলেজের একদল শিক্ষার্থী তাদের কলেজে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেখানে গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে দেয়।
মান্ডিয়ায় গেরুয়া উত্তরীয় পরা একদল ছাত্র হিজাব পরা এক মুসলিম ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার পর ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগান দিলে ওই ছাত্রী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তার জবাব দেয়।
পরিস্থিতি সামলাতে কর্ণাটকের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বুধবার থেকে তিন দিনের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
উডুপির ওই কলেজে ‘হিজাব নিষিদ্ধ’ নিয়ে জানুয়ারিতে পাঁচ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল চেয়ে আদালতে পিটিশন করে।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, হিজাব নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দয়ের করা হয়েছে। হার্ই কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি চলছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করার আগে প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি জানান, কর্ণাটকের কলেজগুলি খোলা যেতে পারে, তবে যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন তাই শিক্ষার্থীরা কোনও রকম ধর্মীয় পোশাক পরে কলেজে প্রবেশ করতে পারবেন না।
শুধু মুখের কথা শুনে কোনও রকম প্রতিবেদন না করার জন্য সাংবাদমাধ্যমকে নির্দেশে দিয়েছে আদালত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আচরণে চরম সংযম বজায় রেখে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত বলেছে, হিজাব পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না তা বিবেচনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এটি ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ কি না তাও বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।