সেরা জয়ে মুমিনুলকে টুপি খোলা অভিনন্দন মাশরাফির

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৮:১০:৫১ পিএম

ক্রীড়া ডেস্ক : মাঠে থেকে বাংলাদেশের অনেক স্মরণীয় জয়ের স্বাক্ষী মাশরাফি বিন মুর্তজা। নেতৃত্বও দিয়েছেন কয়েকটিতে। অনেক জয় দেখেছেন বাইরে থেকে। তার চোখে আগের সব জয়কে ছাপিয়ে গেছে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। খর্বশক্তির দল নিয়েও এমন জয়ে বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক বড় কৃতিত্ব দিলেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হককে।
দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের টানা ১৭ টেস্টের অপরাজেয় যাত্রা থামিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে নেয় ৮ উইকেট।
টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই জয় তোলপাড় ফেলে দেয় ক্রিকেট বিশ্বে।
ম্যাচের পর অধিনায়ক মুমিনুল বলেছিলেন, তার মতে এটিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়। বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফিও সুর মেলালেন টেস্ট অধিনায়কের কণ্ঠে।
“দারুণ। বাংলাদেশের সেরাগুলোর একটি নয়, বলা উচিত যে এটাই সর্বোচ্চ জয়। টেস্ট ক্রিকেটে তো অবশ্যই। বিশেষ করে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে, তারা বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়ন, এটা দারুণ ব্যাপার। অনেকগুলো ক্রিকেটার নেই। সেখান থেকে ভাবলে ফ্রম নোহয়ার এতবড় একটা জয়, দারুণ ব্যাপার।”
শুধু ক্রিকেটাঙ্গনই নয়, গোটা দেশের জন্যই এই জয়কে অনেক বড় ব্যাপার মনে করেন নড়াইল থেকে জাতীয় সংসদে জায়গা করে নেওয়া এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
“মুমিনুল ফোন দিয়েছিল, কিন্তু সময়ের পার্থ্যকের কারণেৃ (কথা হয়নি)। আজকে চেষ্টা করব কথা বলার। ম্যাসেজে দুয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল ব্যাপার হলো, ওরা খেলছে, উপভোগ করছে এবং এত বড় জয় এসেছে এটা আমাদের জন্য, বাংলাদেশের সবার জন্য বিরাট একটা মুহূর্ত।”
নিউ জিল্যান্ড এই সিরিজে পাচ্ছে না তাদের মূল অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে। তবে বাংলাদেশও সফরে গিয়েছে দলের বড় দুই ভরসা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়া। এরকম দল নিয়ে দেশের মাঠে অপ্রতিরোধ্য নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়ায় মাশরাফি বড় ভূমিকা দেখছেন অধিনায়ক মুমিনুলের।
“হ্যাটস অফ টু হিম, সিরিয়াসলি। কারণ যখন তাকে অধিনায়ক করা হলো, মুশফিককে সরিয়ে সাকিবকে আনা হলো, এরপর সাকিব ছিল না দুর্ভাগ্যজনকভাবে (নিষেধাজ্ঞায়), তখন মুমিনুলকে করা হলোৃ আমি নিশ্চিত নই, মুমিনুল নিজেও তখন প্রস্তুত ছিল কিনা, হুট করে। তারপর এত সমালোচনা এত কিছু, ওখান থেকে দলটাকে গুছিয়ে এনে ও এত বড় একটা জয় এনে দিয়েছে।”
“পরে কী হবে, সেটা পরের ব্যাপার। এত বড় জয়ের কৃতিত্ব তার যতটুকু, ততটুকু দিতেই হবে। এখন দলে যারা আছে, বাইরে থেকে যারা দেখি, মনে করি যে সাকিব-তামিম নেই মানে দলের অর্ধেক নেই বা অর্ধেকেরও বেশি। সেই জায়গা থেকে দল নিয়ে গিয়ে মুমিনুল সবাইকে উজ্জীবিত করেছে, জিতেছে, এটা দারুণ ব্যাপার। মুশফিকও ওকে সহায়তা করছে। সব মিলিয়ে পুরো কৃতিত্ব মুমিনুলকে দেওয়া উচিত।”
এই সফরের আগে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে আড়াই দিনের কম খেলা হওয়ার পরও হেরে গেছে বাংলাদেশে। হোয়াইটওয়াশড হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই সংস্করণেই। পাকিস্তান সিরিজের আগে চরম বাজে কেটেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। টেস্টে গত বছর জিম্বাবুয়েতে একটি জয় ছাড়া আর কোনো জয় ছিল না। দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হতে হয়েছে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাছেও।
সব মিলিয়ে এই সফরের আগে দেশের ক্রিকেটে ছিল চরম দুঃসময়। এর মধ্যেই সাকিব-তামিমের মতো দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়া এমন একটা জয় দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন মাশরাফি।
“ওরা দল হিসেবে খেলতে পেরেছে। ব্যাটিং গ্রুপ ভালো ব্যাট করেছে, বোলিং গ্রুপ ভালো বোলিং। বিশেষ করে ক্যাচিং, দারুণ কিছু ক্যাচ নিয়েছে। ম্যাচ জিততে গেলে এসবই মূল জিনিস। আর দল যে অবস্থায় ছিল, প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, মুমিনুল আছে, সুজন ভাই গিয়েছেন, আরও যারা আছেন, তারা হয়তো দলকে উজ্জীবিত করতে পেরেছেন যে, হারানোর কিছু নেই।”
“তবে সব মিলিয়ে নিজেদের নিয়ে ওরা দারুণ একটা বার্তা তৈরি করতে পেরেছে যে কে আছে আর কে নেই, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, নিজেদের আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো জায়গায় যে কোনো কন্ডিশনে ম্যাচ জেতা সম্ভব। এটা দারুণ এক বার্তা নিজেদের জন্য।”