অসময়ে মধুমতির ভাঙনে মহম্মদপুরের ২ গ্রামের ৪০ বসতভিটা বিলীন

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৫:৫৭:৪০ এম

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে অসময়ে মধুমতির তীব্র ভাঙনে  দুটি ইউনিয়নের  ২ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পথে বসে গেছেন।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের  ঢুষরাইল ও বালিদিয়া ইউনিয়নের হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে  গত পাঁচদিনে  মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে ওই এলাকার দুই গ্রামের অন্তত ৪০টি পরিবারের বসতভিটা। ভাঙনের মুখে রয়েছে অন্তত ১০০ পরিবার। এছাড়া মধুমতি তীরবর্তী  রুইজানি, কাশিপুর,গোপালনগর,ঝামা ও যশোবন্তপুর গ্রামে একের পর এক নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক, মসজিদসহ নানা সামাজিক স্থাপনা। 
সরেজমিন ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম ঘুরে মধুমতির ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। ভাঙন কবলিত দুটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান।  এ সময় সাথে ছিলেন মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) রামানন্দ পাল।
ঢুষরাইল গ্রামের নূরুল ইসলাম শেখ  (৬৫) ফসলি জমি ছিল প্রায় ৫ একর। সব জমি গত বছর নদীতে বিলীন হয়েছে। প্রায় এক একর জমির ওপর ছিল তার বসতবাড়ি। এবারের বর্ষায় বিলীন হয়েছে তার বসতভিটা। জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব।
গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দশকে ওই তিন গ্রামের ৮০ ভাগ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এর অধিকাংশ পরিবার তিন-পাঁচবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছে। অসচ্ছলতার কারণে যারা শহরে বা অন্যত্র যেতে পারেনি, তারা একবার এ পাড়ে, আরেকবার অন্য পাড়ে বসতি গড়ছে। কিন্তু এ ভাঙন প্রতিরোধে নেয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাশাপাশি ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম নদীতে ভেঙে ছোট  হয়ে গেছে। নদীর মহম্মদপুর পাড় থেকে পিছিয়ে বসতি গড়েছে অনেকে। বেশির ভাগ পরিবার নদীর অপর পাড়ে বসতবাড়ি করেছে। ওই অংশের নাম এখন চর ঢুষরাইল।
ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম দুটিতে এখন ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে ভাঙন ছিলনা। বর্ষা শেষে পানি কমে যাওয়ার সময় ভাঙন তীব্র রুপ ধারণ করেছে। গত পাঁচদিনে নদী তীরের ৪০টি পরিবারের বসত বাড়ি ঘর ও কয়েকশ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও হুমকিতে আছে অনেক ঘরবাড়ি।  ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর  গ্রামের অধিকাংশ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র বসতি গড়েছে।  এসব গ্রামে হুমকির মুখে রয়েছে অন্তত ২০০ পরিবারের বসতবাড়ি। এ ছাড়া এসব এলাকায় কবরস্থান, সড়ক, হাটবাজার ও  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে হুমকিতে। কয়েকশ পরিবারকে  বসতঘর সরিয়ে নিয়ে গেছেন কেউ কেউ সরিয়ে নিচ্ছেন।  মধুমতি  বসত ঘরের দুই থেকে তিনহাত দূরে ফুঁসছে। বসত ভিটার গাছপালা পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ব্যাপারিদের গাছ কাটতে দেখা গেছে। এসব এলাকার দরিদ্র লোকজনের চুলায় হাড়ি জ্বলছে না। শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। 
ঢুষরাইল গ্রামের নূরুল ইসলাম চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলছিলেন, ‘এ নিয়ে চারবার নদীতে বাড়ি ভাঙল। সবশেষ কয়েক দিন আগে পাকা বাড়িটি নদীতে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি পথের ফকির।’ স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, পাঁচদিন ধরে এ এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুই দিনে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চলতি বর্ষা শেষে ঢুষরাইল ও হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের শাহীদা বেগম,মনোয়ার হোসেন,ওলিয়ার মোল্যা,হালিমা বেগম,সুলতান মোল্যা,নূরুল ইসলাম,শাহাদত হোসেন,রমজান আলী ও মাহফুজার রহমান শেখসহ অন্তত ৪০টি পরিবারের বসতবাড়ি গ্রাস করেছে মধুমতী। ঢুষরাইল  গ্রামের রমজান আলী শেখের প্রায় তিন একর ফসলি জমি ছিল, পুরোটা নদীতে চলে গেছে। তার প্রায় এক একরের ওপর ছিল বসতবাড়ি। সেখানে তিনি আম ও লিচুর বাগান করেছিলেন। তা  নদীতে বিলীন হয়েছে। এ নিয়ে তিনবার নদীতে ভেঙেছে তাদের বাড়ি। তিনি এখন নিঃস্ব। হরেকৃষ্ণপুর  গ্রামের সাবেক স্কুল শিক্ষক মনোয়ার হোসেন জানান, ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় নদীতে এলাকা বিলীন হচ্ছে।
বিধবা শাহীদা বেগম (৭০) কাদতে কাদতে বলেন, তার স্বামী নেই। বসত বাড়ির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। এখন তিনি কোথায় যাবেন জানেন না। অলিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, বাড়ি এই নিয়ে তিনবার সরানো হলো। ভেঙে যাওয়ার আগে বনজ ফলদসহ ৩০টি গাছ পানির দামে বিক্রি করেছেন।  শিশু আবদুল্লাহ (১২)  স্থানীয় স্কুলের  সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সে জানায়, বাড়ি ঘর ভেঙে যাওয়ায় তার পড়া লেখা বন্ধ। বইখাতার খবর নেই। স্কুলেও যায় না সে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাগুরার নির্বাহী  প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান  বলেন, বর্ষা শেষে অসময়ে মধুমতি পাড়ের দুটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিযেছে। নদীর এমন আচরণ অস্বাভাবিক। সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বস্তা ফেলার জন্য প্রকল্প পাঠানো হবে।  ভাঙনরোধে এখানে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। এ জন্য ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হবে।