১ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে ৫ হাজার টাকার বিল পাশ ৩৫ সেবিকার!

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:৪২:২২ এম

# যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল
বিএইচ মোহাম্মদ : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৩৫ জন সেবিকার জনপ্রতি ৫ হাজার ৩২৫ টাকার (টিএডিএ) বিল পাশ করতে ১ হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরআগে তাদের বেতন বিল পাশ করতে প্রতি জনের কাছ থেকে ২ হাজার ৫শ’ ও ইউনিক আইডির খোলার জন্য ৩শ’ ঘুষ নেয়া হয়েছিলো। হাসপাতালের অফিস সহকারী আজগর আলীর নেতৃত্বে এই ঘুষের টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, করোনাকালিন সময়ে সরকারি এই হাসপাতালে ৩৫ জন সেবিকা যোগদান করেন। পরে মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তাদের প্রতিজনের যাতায়াত খরচের বিল দেখানো হয় ৫ হাজার ৩২৫ টাকা। এই বিল পাশ করার জন্য প্রতিজন সেবিকার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়। গত সপ্তাহে অধিকাংশ সেবিকার বিল পাশ হয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ঘুষের ১ হাজার টাকা কেউ বিকাশে আবার কেউ নগদ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেবিকা জানান, ঘুষের টাকা দেয়া নিয়ে অফিস সহকারী আজগর আলীর সাথে তার সামান্য মনোমালিণ্য হওয়ায় তার বিলটি পাশ করা হয়নি। অথচ মনোমালিণ্যের আগে তালিকায় তার নাম ছিলো ১ নম্বরে। আজগর আলীর কাছে ‘সরি’ না বললে নাকি তার বিলটি পাশ করা হবেনা। আজগর আলী তৃতীয় শ্রেনির একজন কর্মচারী হলেও তার কাছে সরি বলার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা সেবিকা। আরও কয়েকজন সেবিকা জানান, এই হাসপাতালে যোগদান করার পর তাদের কয়েক মাস বেতন বন্ধ ছিলো। বেতন বিলের ব্যাপারে তারা অফিস সহকারী আজগর আলীর সাথে যোগাযোগ করেন। বেতন বিল দ্রুত পাশ করার জন্য প্রতি জনের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া হয় ২ হাজার ৫শ’ টাকা। পরে ইউনিক আইডি খোলার নামে নেয়া হয় ৩শ’ টাকা। সেবিকাদের জিম্মি করে ঘুষ নেয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় আজগর আলী দেন দরবার শুরু করেছেন। একাধিক সেবিকা জানান, হাসপাতালে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে ঘুষ আদায়ের জন্য একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান করণিক (বড় বাবু) রেজওয়ান, অফিস সহকারী আজগর আলী সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করেন। সিন্ডিকেটের হয়ে সেবিকাদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করেন বাদল নামে একজন সেবক। অভিযোগ উঠেছে, ঘুষের টাকা পরে সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। অফিসে দায়িত্বরতরা টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। আর টাকা দিতে না চাইলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী একজন সেবিকা।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আজগর আলী জানান, যে কোনো বিল পাশ করার জন্য এজি (অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স) অফিসে টাকা দিতে হয়। ৩৫ সেবিকার বেতন বিল পাশ করার জন্য কিছু টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু যাতায়াত খরচ বিলের জন্য ১ হাজার টাকা ও ইউনিক আইডি খোলার জন্য ৩শ’ টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আজগর আলী।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, ৩৫ সেবিকার (টিএডিএ) বিল পাশ, বেতন বিল পাশ ও ইউনিক আইডি খোলার নামে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক আরও জানান, বিলে পাশ করতে গেলে এজি (অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স) অফিসে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে বিল পাশে হয়রাণির শিকার হতে হয়। এজি অফিসকে ম্যানেজ করে দ্রুত বিল পাশ করার জন্য হাসপাতালের কর্মচারীরা ঘুষ নেয় বলে এখানে যোগদান করার পরই জানতে পেরেছি। কিন্তু অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে আছেন।
এই বিষয়ে যশোর জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স কর্মকর্তা কবীর উদ্দিন জানান, বর্তমানে এজি অফিসে ঘুষ লেনদেন নেই বললেই চলে। তিনি যোগদান করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করেছেন। ঘুষ বাণিজ্য না করার জন্য সকলকে কড়াকড়িভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কবীর উদ্দিন আরও জানান, হাসপাতালের কর্মচারীরা ঘুষ  নিয়ে এজি অফিসের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে।