প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ৭৪, মেম্বর ৮২০

এখন সময়: বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:০৮:৫৩ এম

# মণিরামপুরের ১৬ ইউপিতে ভোট কাল
আব্দুল মতিন, মণিরামপুর : মণিরামপুরের ১৬ ইউপি ভোট গ্রহণ কাল। তিনটি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮৯৪জন প্রার্থী। এরমধ্যে ১৫ ইউপিতে ৭৪জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৬ ইউপিতে সংরক্ষিত ১৮১ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সাধারণ সদস্য  (মেম্বার) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬৩৯জন। ১৫২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করতে প্রস্তুত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব কেন্দ্র গুলোতে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার থাকবে। কেন্দ্র গুলোতে সহকারি প্রিজাইডিং ৮০৫ এবং পোলিং নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৬১০জনকে। তবে উৎকন্ঠা এবং উৎসব দুটিই রয়েছে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা রয়েছেন বিদ্রোহীদের চাপে। এর বাইরে বিএনপি সমর্থিত, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের ইসলামের নেতারাও প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ভোটারদের দাবি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এমনটিই। প্রশাসনের বলছে, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থা থাকবে। এই মুহূর্তে প্রতিটা এলাকায় গ্রাম পাড়া মহল্লায় বিশ্লেষণ চলছে কোন প্রার্থী কেমন ভোট পাবেন এসব নিয়ে। 
রোহিতা: এই ইউনিয়নে ৮জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন হাফিজ উদ্দীন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আনছার আলী সরদার, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে এই ইউনিয়ন বাসী মনে করছেন বিজয়ের ক্ষেত্রে এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাফিজ উদ্দীনের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী আনছার আলী সরদারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। ইতোমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী আনছার আলী সরদারকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। 
কাশিমনগর: এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবে ৫জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইউনিয়নটিতে এ পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইয়াকুব আলী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিস্কৃত) আশরাফুল আলম মিন্টুর মধ্যে ত্রিমুখী ভোটের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। 
ভোজগাতী: এ ইউনিয়নে নারী নেত্রী আসমা তুন্নাহার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের (বহিস্কৃত) শহিদুল ইসলাম মোড়ল এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) আব্দুর রাজ্জাকের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসমা তুন্নাহার দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে শংকার কথা জানিয়েছেন। 
ঢাকুরিয়া: বর্তমান চেয়ারম্যান এরশাদ আলী আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ইউনিয়নে মোট চারজন প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিস্কৃত) আইয়ুব হোসেন গাজীর কথা শোনা যাচ্ছে। ভোটাররা বলছেন চার প্রার্থীর মধ্যে চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী আয়ুব হোসেন গাজীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও আবারও এরশাদ আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন এমন সম্ভাবনার কথা জোরালো ভাবে বলছেন ভোটাররা। 
হরিদাসকাটি: এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে সম্প্রতি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক নিছার আলী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। এ ইউনিয়নে আপাতত চার প্রার্থী মাঠে থাকলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী আলমগীর কবির লিটনের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসী।
মণিরামপুর: আবারও এয়াকুব আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। গত নির্বাচনে ৩৫ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী নিস্তার ফারুকের কাছে পরাজিত হন। নাছোড়বান্দা এয়াকুব আলী হাল ছাড়েননি । এবারও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নিস্তার ফারুক এবং জামায়াত নেতা আহসান কবির লিটনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চলেছেন। ইউনিয়ন বাসী বলছেন, এ ইউনিয়নে নির্বাচনে ফলাফলটা আগেই ধারণা করা মুশকিল। ভোটাররা বলছেন তিন প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেই নির্বাচিত হোক ব্যবধানটা থাকবে সীমিত। 
খেদাপাড়া: ৫ প্রার্থী রয়েছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবে। তৃতীয়বারের মতো এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন আব্দুল আলিম জিন্নাহ। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুজ্জামান শান্ত, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী হিসেবে আব্দুল হক মাঠে রয়েছেন। এই ইউনিয়নের ভোটাররা বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল আলিম জিন্নাহর সাথে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুজ্জামান শান্তর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বির সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আব্দুল আলিম জিন্নাহর দিঘির পাড় গ্রামে নির্বাচনী অফিস রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছেন। 
মশ্বিমনগর: বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুরসহ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। ইউনিয়নবাসী বলছেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হোসেন, জামায়াত নেতা প্রভাষক সেলিম জাহাঙ্গীর এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভাবছেন ভোটাররা। 
ঝাঁপা: বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিস্কৃত) যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স ম আলাউদ্দীন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির রুহুল কুদ্দুস এবং বিএনপি সমর্থিত হুমায়ুন কবির প্রার্থী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে নির্বাচনের দিকে মণিরামপুরবাসী নজর রয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু এবং যুবলীগের সাবেক নেতা বিদ্রোহী প্রাথী স ম আলাউদ্দীনের ভোটের লড়াইয়ের কথা জোরালো ভাবে ভাবছেন। প্রভাবশালী এ দু’নেতার ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটাররাও রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে। 
চালুয়াহাটি: আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছেন উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল ইসলাম। বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ এবারও বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিস্কৃত) হিসেবে বিজয়ের আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। হাল ছাড়েননি প্রাক্তন চেয়ারম্যান বজলুর রহমানও। ৫ প্রার্থী মাঠে থাকলেও ভোটের হিসাব নিকাশ চলছে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা বজলু রহমানকে নিয়ে। 
শ্যামকুড়: এ ইউনিয়নে চার প্রার্থী ছিলেন চেয়ারম্যান পদে। প্রত্যাহারের নির্ধারিত দিনে তিন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। 
খানপুর: আবুল কালাম আজাদ মিলন নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করছেন এই ইউনিয়ন থেকে। ইউনিয়টিতে মোট ছয় প্রার্থী মাঠে থাকলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী সিরাজুল ইসলামকে নিয়েই ভাবছেন ভোটাররা। এলাকাবাসী বলছেন, ইউনিয়নে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মিলন এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে। 
নেহালপুর: চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হুসাইন ফারুক, বিএনপি সমর্থিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুস সাদাত রয়েছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে। অপর দু প্রার্থী মনোয়ার হোসেন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী আনিচুর রহমান রয়েছেন পোস্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইউনিয়নের ভোটাররা বলছেন, জয় পরাজয় থাকবে। হুসাইন ফারুক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুস সাদাতের মধ্যে। 
কুলটিয়া: শেখর চন্দ্র রায় এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। দ্বিতীয় বারের মত তিনি নৌকা নিয়ে আবারও মাঠে নেমেছেন। মোট সাত প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন এই ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (বহিস্কৃত) প্রার্থী আদিত্য মন্ডলও রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। জয় পরাজয় নিয়ে হিসেবের খাতায় চলছে এ দুজনকে নিয়ে। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত মিজানুর রহমান, নাজমুল হক, মনোহর মন্ডল, জাহিদ হাসান এবং প্রভাষ ঘোষ নামের প্রার্থীরা রয়েছেন এলাকাতে। 
মনোহরপুর: বর্তমান চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আক্তার ফারুক মিন্টুও রয়েছেন ভোটারদের কাছে শক্ত অবস্থানে। মূলত তিন প্রার্থী এই ইউনিয়নে নির্বাচনে নামলেও জয় পরাজয়ের হিসাব চলছে মাস্টার মশিয়ুর রহমান ও মিন্টুকে নিয়ে। 
দূর্বাডাঙ্গা: বর্তমান চেয়ারম্যান মাযহারুল ইসলাম নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (বহিস্কৃত) মাসুদ পারভেজ, বিদ্রোহী প্রার্থী আতাউর রহমান লাভলু, বিএনপি সমর্থিত আলতাফ হোসেন এবং নজরুল ইসলাম প্রার্থী রয়েছেন। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রাথী মাযহারুল ইসলামের বিপরীতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ এবং বিএনপি সমর্থিত আলতাফ হোসেন। এলাকাবাসী আতঙ্কে রয়েছেন এই ইউনিয়নের সুষ্ঠু ভোট নিয়ে। বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ এবং আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রাথী মাযহারুল ইসলাম মাঠ দখলের লড়াইয়ে রয়েছেন তারা। 
উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ জানান, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থা থাকবে। ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারবেন এমন পরিবেশ থাকবে সকল কেন্দ্রে। 
ওসি নুর-ই আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ভোট নিরপেক্ষ করতে প্রশাসনিক সকল ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।