বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:২১:০৯ পিএম

দেশে বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুর প্রকৃত সংখ্যা কত- এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যই নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কাছে। বিদ্যালয়বহির্ভূত শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

একটি বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও বলেছেন, বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের তথ্যে গরমিল রয়েছে। প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি)-৪-এর সাব-কমপোনেন্টের আওতায় ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কর্মসূচি থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা না থাকায় এর সুবিধা পাচ্ছে না বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুরা। এই শিশুদের প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তাদের মূলধারার শিক্ষায় নিয়ে আসার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সংসদ সদস্য বেগম মেহের আফরোজ, মো. নজরুল ইসলাম বাবু, বেগম ফেরদৌসী ইসলাম ও কাজী মনিরুল ইসলাম বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমান কমিটিকে সহায়তার উদ্দেশ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পিইডিপি-৪-এর সাব-কমপোনেন্টের আওতায় ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আট থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করার কথা। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ কর্মসূচির মাধ্যমে ১ লাখ বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুর জন্য চলমান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কারণ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাছে দেশে বিদ্যালয়বহির্ভূত শিক্ষার্থীর কোনো তালিকাই নেই। দেশের বিদ্যালয়বহির্ভূত প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে ধোঁঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানান, এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বৈঠকসূত্র জানান, বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুর তালিকা না করে আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে। কেস টু কেস ভিত্তিতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করে সারা দেশে কাজ শুরুর পরামর্শ দেন উপস্থিতরা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্য সদস্যরাও কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। কমিটির সদস্য বেগম মেহের আফরোজ বলেন, করোনাকালে অতীতের তুলনায় শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেশি ঝরে পড়ছে। মূলধারা থেকে ছিটকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে এ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হলে এর সঙ্গে যুক্ত সবার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর আশঙ্কা তৈরি হবে। এ প্রকল্পের কাজ সারা দেশে চালু করার পরামর্শ দেন তিনি। নজরুল ইসলাম বাবু বৈঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কর্মসূচির আওতায় বিদ্যালয়বহির্ভূত যেসব শিক্ষার্থী মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে তাদের ক্লাস এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ এই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষার মূলধারায় সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। স্কুলে না যাওয়া শিশুদের  ডাটাবেজ তৈরি করে দ্রুততার সঙ্গে কর্মসূচিভুক্ত সব এলাকায় ক্লাস শুরুর পরামর্শ দেন তিনি।

 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয়বহির্ভূত আট থেকে ১৪ বছর বয়সী ২১ লাখ ঝরে পড়া শিশুকে মূলধারায় আনতে কর্মসূচিটি গ্রহণ করা হয়। তবে বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সময় তথ্যের গরমিল ধরা পড়ে। সমস্যা সমাধান করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কাজ করছে। দ্রুতই এ তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক আতাউর রহমান গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীর তালিকা আমাদের কাছে নেই। এটি আমাদের কাছে থাকার কথাও না। এ তালিকা প্রণয়ন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাজ।’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার মোবাইলে কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি।