করোনায় থমকে ছিল ব্যবসা, ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৩:১০:৫১ পিএম

# সারাদেশে চাহিদা কালীগঞ্জের নাকফুল 
জামির হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)  : সারাদেশের স্বর্ণালংকারের বাজারে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কারিগরদের তৈরি করা নাকফুলের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। এখানকার দক্ষ কারিগরদের তৈরি করা সেই নাকফুলে পড়েছিল মহামারি করোনার ছাপ। করোনা বিস্তারকালে নাকফুল কিনতে অন্য জেলা থেকে আসতো না কোনো পাইকার। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নাকফুল তৈরির কারখানা। কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছিল এখানকার কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজারের অধিক কারিগর। কারখানার মালিকেরা হারিয়েছেন পুঁজি। যা এখনও ঠিকমত কাটিয়ে উঠতে না পারলেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মালিক শ্রমিক উভয়ই ব্যস্ত। 
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বর্ণকারদের সূত্রে জানাগেছে, এ উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের অধিক নাকফুল তৈরির কারিগর রয়েছে। তাদের তৈরি করা বিভিন্ন ডিজাইনের নাকফুলের সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানকার নাকফুলের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে এ নাকফুল কিনে নিয়ে যায়। কিন্ত করোনার সময়ে তাদের আসা একেবারে বন্ধ ছিল। তাদের মতে, স্বর্ণালংকার একটি সৌখিন জিনিস। এগুলো মানুষ ব্যবহার করে মনের সখে। কিন্ত সখ পূরণ কখনই জীবন বাঁচানোর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। সে কারণেই তো সৌখিন এ খাতে এতো ধস নেমেছিল। বর্তমানে দেশে স্বাভাবিকতা আসায় আবার কারিগরেরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
স্বর্ণকারদের সূত্রে আরও জানাগেছে, এখানকার নাকফুলের চাহিদা সারাদেশে। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পাইকারেরা এসে এখানকার ঐতিহ্যবাহী নাকফুল কিনে নিয়ে যান। এটা অনেক পূর্ব থেকে বয়ে আসছে। যা করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ ছিলো। এখানকার নাকফুলের নকশা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। অসংখ্য নকশার নাকফুল কারিগরেরা তৈরি করে রেখে দেয় যে মডেলগুলো পছন্দ করে কিনে নিয়ে যান। সব ধরনের নাকফুলের চাহিদা রয়েছে তবে আড়াইশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের নাকফুল ঢাকার পাইকারেরা বেশি পছন্দ করেন। 
স্বর্ণ কারিগর কালীগঞ্জ পৌরসভার কলেজপাড়া গ্রামের সুশান্ত বিশ^াস জানান, প্রায় ২০ বছর আগে থেকে নাকফুল তৈরির কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন এ কাজ করে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আয় করেন। তা দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালাতে হয় তার। কিন্ত করোনার সময়ে এ এলাকার নাকফুলের সমস্ত কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে সময়ে কোনো অলংকার বিক্রিও ছিল না। ফলে দিনমজুর শ্রেনীর কারিগরেরা কাজ হারিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থেকে বেকার জীবনযাপন করেছে। পরে এখন আবার তাদের কাজ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক পর্যায়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধু কারিগরেরাই নয় কারখানার মালিকেরাও অনেকে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। মালিকেরাও এখন নতুন উদ্যোমে আবার শুরু করেছে।
জিহাদ হোসেন নামের আরেক কারিগর জানান, এ এলাকার নাকফুলের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। সারাদেশে তাদের তৈরী বিশেষ নঁকশা করা নাকফুলের  চাহিদা রয়েছে। তারা মজুরী ভিত্তিতে কাজ করেন। যে কারনে কারখানা বন্ধ থাকলে তাদের রোজগার থাকে না। তখন তাদের অনাটন শুরু হয়। 
কালীগঞ্জ উপজেলা কালীগঞ্জ উপজেলা জুয়েলারী মালিক সমিতির (বাজুস) সভাপতির ওসমান আলী জানান, করোনার সময়ে তাদের পেশাজীবীদের পর্যাপ্ত ক্ষতি হয়েছে। কারন এ সময়ে সব ধরনের মানুষ করোনার ভয়ে ভীতু ছিল। সৌখিন অলংকার কেনাকাটার কথা কেউ ভাবতোই না। তাই সৌখিন এ খাতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্বর্ণকার মালিক অভাবে পড়ে দায়দেনার শিকার হয়েছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাদের বেশ সময় লাগবে। তারপরও নতুন উদ্যোমে তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। 
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানন, আমি নতুন যোগদান করেছি তবে কর্মহীন সকল শ্রমিককে সহযোগিতা করা হবে। আমি স্বর্ণ কারিগরদের জন্য সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।