বেনাপোল সীমান্তে বাংলাদেশ ভারত বাণিজ্য বৈঠক

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৪:১৭ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বৈষম্য দূর করতে দুই দেশের কাস্টমস, বন্দরের সাথে বাণিজ্যিক সংগঠনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বেনাপোল-পেট্টাপোল সীমান্তের শূন্য রেখায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় চলমান সমস্যা সমাধানে একমত পোষন করেন বৈঠকে অংশ গ্রহণকারীরা। এ বৈঠকের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে বাণিজ্যে গতি ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানাযায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশের স্থলপথের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি, রফতানি বাণিজ্য সম্পাদন হয়ে থাকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিকেল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব।
তবে এপথে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে রয়েছে নানান অনিয়ম ও বৈষম্য। বন্দর আধুনিক বলা হলেও বাণিজ্য সম্প্রসারণ ঘটেনি বন্দরে। এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের বনগাঁর কালিতলায় পণ্যবাহী ট্রাক সিরিয়ালের নামে মাসের অধিক সময় আটকে রাখা হয়।
আমদানি পণ্য ভারত থেকে ৩শ ট্রাক দেয়া হলেও বাংলাদেশি রফতানি পণ্য দেড়শো ট্রাকের বেশি গ্রহণ করে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সীমান্তে নিরাপত্তার নামে বিএসএফের তল্লাশীতে ধীরগতি নামে ব্যণিজ্যে। এতে দ্রুত পণ্য সরবরাহ না হওয়ায় দির্ঘদিন ধরে দেশে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হয়ে আসছিল।
এসব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় আহ্ববান জানানো হলেও গুরুত্ব মেলেনি। অবশেষে সীমান্তের শুণ্য রেখায় বাণিজ্য বৈঠক করেন দুই দেশের কাস্টমস,বন্দর ও ব্যবসায়ীরা। সভায় প্রতিদিন ৫শ ট্রাক রফতানির প্রতিশ্রুতি দেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য আমদানি, রফতানিরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ জানান, ভারতের কালিতলা পৌর পার্কিংয়ে মাসের পর মাস সিরিয়ালের নামে ট্রাক আটকে রেখে বাণিজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব ট্রাক পাঠালে আমরা গ্রহন করতে প্রস্তুত রয়েছি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সরকার বাণিজ্য ও পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত ২৪ ঘন্টা সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। অথচ আমাদের ব্যর্থতায় বাণিজ্য প্রসার ঘটছে না।
ভারতের বনগা পৌর মেয়র গোপাল শেড বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য গতিশীল করতে হবে। নতুন দায়িত্ব নিয়ে বঁনগার কালিতলা পার্কিংয়ের অনেক অনিয়ম বন্ধ করা হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, যে ভাবে হোক প্রতিদিন ৫শ ট্রাক পণ্য প্রবেশ করাতে হবে। ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের দায়ভার নিতে হবে।
পেট্টাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হলে দুই দেশের বন্দরে পণ্য পৌঁছানো মাত্রই খালাস করার ব্যবস্থা করতে হবে। পণ্যবাহী ট্রাক আটকে থাকলে লোকশান সবার।
ভারতের ২৪ পরগনা বনগা অঞ্চলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম আলী বলেন, ভারতের বেনাপোল বন্দর যত ট্রাক নিতে পারবে আমরা দিতে প্রস্তুত। এতে ভারত অংশেও পণ্যজট কমবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা বলেন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হস্তক্ষেপ করার কথা বন্দর-কাস্টমসের। কিন্তু অন্য সংস্থা হস্তক্ষেপে বাণিজ্য স্থবির হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক সঞ্জয় বাড়ই বলেন, বেনাপোল বন্দরের জায়গা রয়েছে ৯০ একর আর পেট্টাপোল বন্দরের মাত্র ২৫ একর। জায়গা সংকটে বাণিজ্য প্রসার হচ্ছেনা।
বন্দরের তথ্য মতে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ১২টি বন্দরের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি, রফতানি বাণিজ্য সম্পাদন হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে। প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়।