কোটচাঁদপুরে জরায়ুর অপারেশনকালে মূত্রথলি কাটা ধরা পড়লো চারমাস পর

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:২৬:৩৬ পিএম

আলমগীর কবির, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) : কোটচাঁদপুরে মাহবুবা প্রাইভেট হাসপাতালে জরায়ু অপারেশন করতে এসে মূত্রথলি হারালেন সাহিদা আক্তার লিপি (৪০)। ডাক্তাররা তার জরায়ুর টিউমারের পরিবর্তে কেটে ফেলেছেন মূত্রথলি। বিষয়টি জানার পরেও দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসার নামে তার সাথে চলেছে প্রতারণা। লিপি ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বেশকিছু দিন ধরে তার জরায়ুতে টিউমার হওয়ার কারণে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। গত ২৭ মে তিনি মাহবুবা হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিন বিকেলে ডা: রাকিবুল ইসলাম ও ডা: আনিচুর রহমান তার অপারেশন করেন। অপারেশন শেষে প্রায় দশ দিন হাসপাতালে থাকার পরও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। মূত্রথলি কেটে ফেলার কারণে সারাক্ষণ ফোটায় ফোটায় প্রস্রাব বের হতে থাকে। সাথে সাথে পেটেও প্রচণ্ড জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হয়। ১০ জুন তিনি তার সমস্যা নিয়ে ডা: রাকিবুলের কাছে আসলে নতুন ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তাকে বিদায় দেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই লিপির পেটের জ্বালা যন্ত্রণা কমেনি। সে কারণে তিনি ২৫ জুন চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অবস এন্ড গাইনী) ডা: আকলিমা খাতুনকে দেখান। এখানে পরীক্ষায় লিপির মূত্রথলি কাটা ধরা পড়ে। ডা: আকলিমা খাতুনের কাছে চিকিৎসা নেয়ার পরও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। নিরূপায় হয়ে ১৪ আগষ্ট তিনি ফরিদপুরে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউরোলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: জে.সি সাহা’র কাছে যান। সেখানেও পরীক্ষায় মূত্রথলি কাটা ধরা পড়ে। এ অবস্থায় ডাক্তার পুনরায় অপারেশনের পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে ফোটায় ফোটায় প্রস্রাব পড়ে তার পেটের ভিতরে ইনফেকশন হয়। কিন্তু লিপি আর্থিক দৈন্যতার কারণে দ্রæত সময়ের মধ্যে অপারেশন করাতে ব্যর্থ হন। অবশেষে দিন মজুর স্বামী তার স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে ধারদেনা করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানকার চিকিৎসক ডা: শোভা বর্ধনের অধীনে লিপি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দীর্ঘ সময় পার হওয়ার কারণে পেটের ইনফেকশন বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় অপারেশন করতে বিলম্ব হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। তার প্রথম অপারেশনের সময় ডাক্তাররা লিপির মূত্রথলি কাটার বিষয়টি নিশ্চিত জানার পরও দীর্ঘ  চার মাস চিকিৎসার নামে তাকে ঘুরাতে থাকেন। লিপি জানান, ডা: রাকিবুল ইসলামের সাথে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে অপারেশন করান। চুক্তির টাকা নেয়ার পরও তিনি তার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি নেন। তিনি বলেন, টাকা বেশি নেয়ায় আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু ভুল অপারেশন করে আমাকে যে কষ্ট ও অর্থদণ্ড করেছে তার বিচার চাই আমি। এ ব্যাপারে রাকিবুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমি অপারেশন করিনি। অপারেশনের কাজে ডা: আনিচুর রহমানকে আমি সহায়তা করেছি। আনিচুর রহমান জানান, লিপির অপারেশন আমি করেছি। এ জাতীয় অপারেশন করতে গেলে কখনও কখনও ভুলত্রæটি হয়। রোগীকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তার অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেবো। সার্জন ছাড়া অপারেশন করতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ডা: ফজলে আকবরের মৃত্যুর পর রিমোট এরিয়ার অপারেশনগুলো আমিই করছি। তিনি আরও বলেন আমি এ পর্যন্ত প্রায় ৪’শ অপারেশন করেছি। সাহিদা আক্তার লিপি’র অভিযোগ রাকিবুল ইসলাম ও হাসপাতাল মালিক লিটনের সাথে কথা বলেই আমরা তাদের চুক্তিতে সম্মত হয়েই অপারেশনের জন্য সেখানে ভর্তি হই। অথচ তারা অপারেশনের নামে আমাকে বিপদে ফেলে কেউ কোন দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। অপচিকিৎসার শিকার সাহিদা আক্তার লিপি (৪০) জীবননগর  উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের আশাদুল হকের স্ত্রী। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তা ডা: আব্দুর রশিদ বলেন ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।