বাবুল আক্তার, চৌগাছা: চৌগাছায় দিঘড়ী দাখিল মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া সুপার শাহানাজের বিরুদ্ধে ফের জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে তার জালিয়াতির সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুপার শাহানাজ পারভীন বরখাস্ত হওয়ার পর মাদরাসার সহসুপার মাওলানা মাছুদ রানাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। ৫ আগস্টের পর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়।
সুপার শাহানাজ স্বপদে ফিরতে সভাপতিকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সুপারের অনৈতিক দাবি পূরণ না করায় চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। পরে নানা ষড়যন্ত্র করে ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মাছুদ রানাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ (ইউএনও- মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার) বদলী হয়ে অন্যত্রে চলে গেলে শাহানাজ পারভীন জাল-জালিয়াতি করে একটি ভূয়া কমিটি দেখিয়ে নিজের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার ও বন্ধ থাকা বেতন চালু করে খাতা কলমে স্বপদে ফিরে যান।
বিষয়টি বুঝতে পেরে এলাকাবাসী সুপার শাহানাজ পারভিনের বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উল্লেখ্য সুপার শাহানাজ পারভীন মাদরাসায় যোগদানের পর থেকে নানা অপকর্মে সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, মাদরাসার বিভিন্ন ফান্ড থেকে অর্থ তছরুপ, সরকারের দেয়া কম্পিউটার ল্যাব আত্মসাৎ, জালিয়াতি করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্যে, শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্য আচরণ, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, রাজনৈতিক দাপট প্রদর্শন। তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব¡ হুমকির মুখে পড়ে।
ফলে এলাকাবাসী সুপার শাহানাজ পারভীনকে অপসারণের একদফা দাবিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধনসহ নানা বিক্ষোভ করতে থাকেন। আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা সুপার শাহানাজ পারভীনকে বরখাস্ত আদেশ দেন। পরে তিনি তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানকে প্রধান করে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ও উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে সদস্য করে সুপারের দুর্নীতি ও জালিয়াতি তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্র শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, মাদরাসার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী সুপার শাহানাজ পারভীনের অপসারণের দাবিতে বারবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী সুপার শাহানাজ পারভীনের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনও করেন।
অভিযোগকারী দিঘড়ী গ্রামের বাসিন্দা মাদরাসার দাতা সদস্য নজরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, জয়নাল হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম জানান, আমরা এলাকাবাসীর পক্ষে সুপার শাহানাজ পারভীনকে অপসারণের একদফা দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমাদের দাবি না মানলে আমরা ফের বড় কোন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম বজলুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসমিন জাহান (অঃদঃ) বলেন, এলাকাবাসীর দেয়া একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।