বিল্লাল হোসেন : যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাজরাখানায় ‘অবৈধ বলুহ দেওয়ানের মেলায়’ আয়ের অর্থ মিলেমিশে ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় থানা পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা এই ভাগবাটোয়ারার সাথে জড়িত। ফলে অবৈধ ‘বলুহ দেওয়ানের মেলায়’ অশ্লীল নৃত্য মাদক ও জুয়ার আসর চলছেই। মেলায় এমন কর্মকাণ্ডে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ‘প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার হাজরাখানায় ‘বলুহ দেওয়ানের ওরশ’ উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসনের অনুমতিতে এই ওরশ চলে। কিন্তু ওরশের অন্তরালে মেলায় অশ্লীল নৃত্য, মাদক- জুয়ার আসর জমজমাট হয়ে উঠেছে। শুরু থেকেই অনেকটা ফ্রি স্টাইলে এই অনৈতিকতা চলছে।’
সূত্র জানায়, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওরশের অনুমোদন শেষ হলেও রাতের আধারে এখনো চলছে অশ্লীল নৃত্য মাদক- জুয়ার আসর। মেলার কয়েকটি স্থানে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর জমজমাট। মাজারের চারপাশ, কপোতাক্ষ নদের পাড়ে গাঁজার আসর ও বিক্রি চলছে। এছাড়া মাজারের সামনে গানের আসরে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করা হচ্ছে। ফলে তরুণ ও কিশোররা বিপথগামী হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। পুলিশের উপস্থিতিতে মাদক-জুয়ার আসর ও অশ্লীল নৃত্য চলার কারণে স্থানীয় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’
একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘বলুহ দেওয়ানের মেলার’ কোনো অনুমতি নেই। প্রশাসন ৯ দিনব্যাপী ওরশ মাহফিলের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ওরশের নামে চলছে মেলা । দুই কিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে মেলার আয়োজন। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। রাস্তার দুই পাশে দোকানিরা বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়েছেন।’
অভিযোগ উঠেছে, ‘আয়োজক কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান ও ছাত্রদলের স্থানীয় এক নেতার সহায়তায় মেলায় অন্তরালে অশ্লীল নৃত্য ও মাদক-জুয়ার আসর চলছে। সেখান থেকে অবৈধভাবে আয় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আর ফায়দা লুটছেন পুলিশ, রাজনৈতিক নামধারী কিছু ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা। ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে অবৈধ ‘বলুহ দেওয়ানের মেলা’। উপজেলা প্রশাসন মেলা বন্ধের জন্য মাইকিং করলেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।’
কিছু স্থানীয়ের দাবি, ‘অর্থের লোভে মেলায় রাতে অশ্লীল নৃত্য ও মাদক-জুয়ার আসর বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে। মেলায় দায়িত্বরত পুলিশ সুবিধা নিয়ে এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। মাঝে প্রশাসনের অভিযানে কয়েকজন হিজড়া, ৪ মাদকসেবী, ১ জুয়াড়ি ও আটক হয়। অশ্লীল নৃত্যের মঞ্চ ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্থান ত্যাগ করার পরই ফের অশ্লীল নৃত্য, মাদক-জুয়া আসর শুরু হয়। বর্তমানে এসব অনৈকতা বন্ধে অভিযান নেই। এতে তরুণ ও কিশোরা বিপথগামী হচ্ছে। সেই সাথে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, ‘১৮ সেপ্টেম্বর মেলার অনুমতি শেষ হয়েছে। এখন ভাঙা বাজার চলছে। মেলায় অশ্লীল নৃত্য, মাদক-জুয়ার আসর নেই। অবৈধ মেলার টাকা ভাগবাটোয়ারা অভিযোগ সঠিক নয়।’
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ‘বলুহ দেওয়ানের মেলায়’ অশ্লীল নৃত্য ও মাদ-জুয়ার আসর বন্ধে পুলিশ সব সময় কাজ করছে। মেলার অনুমতি সম্পর্কে কিছু জানা নেই। এটা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জিজ্ঞাসা করেন বলে ফোনের লাইন কেটে দেন ওসি।’
চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান জানান, ‘বলুহ দেওয়ানের মেলার অনুমতি নেই। শুধু ওরশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। মেলা বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।’