Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

নেপালে বিক্ষোভ ‘ছিনতাই হয়েছে’, আক্ষেপ জেন-জি’র, সড়কে সেনা টহল

এখন সময়: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ০৭:৪৫:০৩ পিএম

 

নিউজ ডেস্ক: কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অস্থিরতার সময় পার করা হিমালয়ের দেশ নেপালের সেনাবাহিনী কাঠমান্ডুর সড়কগুলোতে টহল জোরদার করেছে।

বিবিসি লিখেছে, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দেশটির জেন-জি’র দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পর বাধ্য হয়ে দেশটির সেনাবাহিনীকে দৃশ্যপটে হাজির হতে হয়।

এদিন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভকারীরা একের পর এক রাজনীতিকের ঘরে লুটপাট, ভাঙচুর চালান, সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেন, পার্লামেন্টেও দেন আগুন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ অস্থিরতা এরই মধ্যে দেশটিতে ২০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

তবে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া ‘জেন-জি’ গোষ্ঠীগুলো এ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নিজেদের দূরে রাখছে; ‘সুযোগসন্ধানীরা’ তাদের বিক্ষোভ ‘ছিনতাই করে নিয়েছে’ বলেও এখন তাদের দাবি।

বুধবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়েছে, বেশিরভাগ বাসিন্দা কারফিউ মেনে চলায় রাজধানী অন্য দুই দিনের তুলনায় বেশ শান্ত, তার মধ্যেই পুড়তে থাকা ভবনগুলো থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।

দেশজুড়ে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ দেওয়া হয়েছে, সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেনাবাহিনী।

তারা সহিংসতা ও লুটপাটে জড়িত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের তথ্যও দিয়েছে।

কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় সামরিক চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। কর্মকর্তারা মঙ্গলবারের বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু নিউ বানেশ্বর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোর পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখছেন।

এর মধ্যে সামান্য যে শব্দ আসছে. তাও আসছে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের লাউডস্পিকার থেকে। তারা লোকজনকে ঘরে থাকতে এবং ‘অপ্রয়োজনে বের না হতে’ অনুরোধ করছেন।

এরপরও কিছু অল্প বয়সীকে রাস্তায় দেখা যায়, তারা মাস্ক পরে ও ময়লার ব্যাগ হাতে নিয়ে বিক্ষোভে সৃষ্ট জঞ্জাল পরিষ্কার করছেন।

এদেরই একজন ১৪ বছর বয়সী কেসাং লামা। দুইদিনের বিক্ষোভে না থাকলেও এই ঘটনা নেপালে পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদী এ কিশোরী।

“দীর্ঘদিন ধরে নেপালে দুর্নীতি চলে আসছে। দেশের পরিবর্তন করার জন্য এটাই সেরা সময়। আমি সত্যিই আশা করছি যে এই বিক্ষোভ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে,” ভাষ্য কেসাংয়ের।

পরিবর্তনের পক্ষে থাকা ২৪ বছর বয়সী পরশ প্রতাপ হামাল বলছেন, তিনি জঞ্জাল পরিষ্কারে নেমেছেন, কেননা এগুলো ‘অনেক দূষণ সৃষ্টি করছে’।

মঙ্গলবারের বিক্ষোভে থাকা এ নেপালি বিশ্বাস করেন, তার দেশের দরকার কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহের মতো ‘স্বাধীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’, যারা ভালো নেতা হয়ে উঠতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মার ওলির পদত্যাগের কারণে নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাওয়া নেপালে আপাতত সেনাবাহিনীই অস্থির পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

ওলির সরকার নিবন্ধনহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ায় সোশাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলতে ও দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সোমবার বিক্ষোভে নামে তরুণরা। ওই বিক্ষোভ সহিংসতা রূপ নিলে সেদিনই ১৯ বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান।

সরকার সেদিন রাতে তড়িঘড়ি সোশাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। পরেরদিন পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এদিন আরও তিনজনের নিহত হওয়ার খবর আসে।

সংঘাতে দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আগুনে আদালত প্রাঙ্গণ ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়ায় বুধবার নেপালের সুপ্রিম কোর্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শুনানি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে বিক্ষোভ, বিশৃঙ্খলার মধ্যে কাঠমান্ডুর আশপাশের জেলগুলো থেকে কয়েক হাজার কয়েদি পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

পশ্চিম নেপালের বাঙ্কেতে একটি কিশোর সংশোধনাগার থেকে পালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মঙ্গলবার রাতে ৫ অল্প বয়সী কয়েদি নিহত হয়; নিহতদের সবার বয়স ১৮-র নিচে বলে ওই সংশোধনাগারের পরিচালক নিশ্চিত করেছেন।

সামরিক বাহিনী এখন জেন-জি বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। এখন ছাত্রনেতারা তাদের দাবিনামা প্রস্তুত করছে বলে তাদেরই এক প্রতিনিধি বিবিসিকে বলেছেন।

বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীই এখন মনে করছেন, তাদের আন্দোলনে ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ ঢুকে পড়েছিল। অথচ মঙ্গলবারের বিক্ষোভের আয়োজক নেপালের জেন-জি’র চাওয়া ছিল পরিষ্কার; জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অবসান, এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে বিক্ষোভকারীরা।

“আমাদের আন্দোলন অহিংস ছিল এবং এখনো অহিংসই আছে, এটি শান্তিপূর্ণ নাগরিক অংশগ্রহণের ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিদাতারা বলেছেন, তারা পরিস্থিতি ‘দায়িত্বশীলভাবে মোকাবেলায়’, নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে মাঠে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সক্রিয় আছেন।

বুধবার থেকে আর কোনো বিক্ষোভ নেই বলেও তারা নিশ্চিত করেছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশকে যেখানে যেখানে প্রয়োজন কারফিউ দিতেও অনুরোধ করেছেন তারা।

“দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত করা বা অন্য কাউকে আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ অপব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্যই আমাদের ছিল না,” তাদের বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে।

সেনাবাহিনীও বলছে, বিক্ষোভে নানান ‘ব্যক্তি ও অরাজক গোষ্ঠী’ অনুপ্রবেশ করে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে।

“যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নানান অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদেরকে ধরার ও নিয়ন্ত্রণে আনার কাজই মূলত করছি আমরা,” বলেছেন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেট।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)