অনুমতি থাকলেও ডলার সংকটে চাল আমদানিতে অনিশ্চয়তা

এখন সময়: বুধবার, ৫ জুন , ২০২৪, ১০:২৮:৫১ পিএম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত থেকে চাল আমদানির সময়সীমা শেষ হয়েছে বুধবার। অনুমতি থাকলেও চাল রপ্তানিতে ভারত সরকারের শুল্ককর আরোপ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার-সংকটের কারণে এতো দিন চাল আমদানি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। গত ২১ মার্চ ও ১৬ এপ্রিল দুই ধাপে দেশের ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে (১৫ মে) বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এতে বরাদ্দ বাকি চাল আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দেশের চালের চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টনের মতো। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও মজুত করতে চাল আমদানি করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেশে চালের দাম বাড়লে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে গত ১৩ মার্চ দেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল রয়েছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন ও আতপ চাল ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। পরে ১৬ এপ্রিল আরও ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল রয়েছে ৯১ হাজার মেট্রিক টন এবং আতপ চাল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। সরকার আমদানি ও বাজারে সরবরাহের শেষ সময় বেঁধে দিয়েছিল এ বছরের ১৫ মে। তবে চালের ওপর ভারত সরকারের নানা শর্ত, ২৫ শতাংশ শুল্ককর যুক্ত ও দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট থাকায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করতে পারেননি। এর মধ্যে শেষ হয়ে যায় আমদানির সময়সীমা। এ পর্যন্ত দুটি চালানে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। সময় শেষ হওয়ায় এবং শুল্ক বৃদ্ধি বহাল থাকায় বরাদ্দ অবশিষ্ট চাল আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা।

সাধারণ ক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে বেড়েছে চালের দাম। তাতে কষ্ট হয়ে যায়। তবে চাল আমদানি স্বাভাবিক হলে দাম কমবে শুনতে পাচ্ছি।’

বেনাপোল বাজারের চাল বিক্রেতা সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে চালের দাম বাড়তি। খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫০ টাকা, কাজল লতা, ৫৫ টাকা, বাসমতি ৭৪ টাকা, ৬৩ চাল ৬৮ টাকা ও মিনিকেট ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি হলে আর নতুন ধানের চাল কৃষকের ঘরে উঠলে দাম কমবে আশা করছি।’

চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেনাপোলের নিপুণ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী লিপু হোসেন বলেন, এবার তারা সরকারের কাছ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। তবে চালের ওপর ভারত সরকারের নানা শর্ত আরোপ, ২৫ শতাংশ শুল্ককর যুক্ত ও দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট থাকায় এখন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে পারেননি। এর মধ্যে আমদানির সময় শেষ হয়েছে। তাতে তার অনেক টাকা লোকসান গুণতে হবে।

চাল আমদানিকারক হাজি মুছা করিম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, চাল আমদানিতে ভারতে ২৫ শতাংশ ও বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাতে আমদানি করে তেমন লাভ নেই। নতুন করে যদি সরকার আমদানির সময়সীমা বাড়ায়, তবে তারা আমদানির সুযোগ পাবেন।

এ বিষয়ে খাদ্যদ্রব্যের মান পরীক্ষা করে খালাস করার অনুমতির প্রতিষ্ঠান বেনাপোল বন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, নতুন করে চাল আমদানির অনুমতি পেলে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হবে। গত দুই বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বলেও জানান তিনি।