ফের ৩ দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি

যশোর, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায় একযোগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

এখন সময়: শনিবার, ৪ মে , ২০২৪, ১২:৪৬:১৯ এম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনের ব্যবধানে যশোরে ফের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সোমবার এই জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই তাপমাত্রা ছিল খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায়। বাংলাদেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যশোরে এরআগে শনিবার সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছিল। তারপর থেকে তাপমাত্রা খাতাকলমে কমে গেলেও তপ্ত রোদে বাইরে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল ও বিকেলের দিকে আকাশে কিছুটা মেঘ দেখা যায়। এতে মেঘের ফাকে সূর্য উকিঝুঁকি মারায় তাপ বেশি অনুভূত হয়।

লাগাতার তাপের দহনে অস্থির হয়ে পড়েছে দেশের এই অঞ্চল। এ ধরণের উচ্চ মাত্রার তাপপ্রবাহ মরু এলাকায় সহনশীল হলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে প্রাণঘাতী-বলেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ‘হিট অ্যালার্ট’ বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৭২ ঘণ্টার জন্য এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের ভাষ্য, মরু অঞ্চলে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনীয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের ক্ষেত্রে তা মোটেও সহনীয় পর্যায়ের নয়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ তাপপ্রবাহ দীর্ঘ সময়জুড়ে চলমান থাকলে দেখা দিতে পারে সংক্রামক-অসংক্রামক নানা ব্যাধি। এমনকি মানবমৃত্যুরও কারণ হয়ে উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রির ওপরের তাপমাত্রা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে মানবদেহে তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব বাড়িয়ে দেয় আর্দ্রতা, বিকিরণ ও বাতাসের গতিপ্রকৃতি। প্রচণ্ড গরমে মানবদেহকে ঠাণ্ডা করার একটি শরীরবৃত্তীয় পদ্ধতি হলো ঘাম নিঃসরণ। মরুভূমির আবহাওয়ায় মানুষ ঘামলেও স্বাভাবিক অবস্থায় তা সাধারণত বোঝা যায় না। কারণ, আর্দ্রতা না থাকায় এ ঘাম খুব দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। গোটা বিশ্বের মধ্যে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোয়। এ আর্দ্রতার কারণে ঘাম বাষ্পীভূত হতে সময় নেয় তুলনামূলক অনেক বেশি। বিশেষ করে ঘরের বাইরে ছায়াহীন উত্তপ্ত পরিবেশে এ আর্দ্রতার কারণে শরীরের ঘাম নিঃসরণের মাধ্যমে নিজেকে ঠাণ্ডা করার প্রক্রিয়াটি ব্যাপক মাত্রায় বাধাগ্রস্ত হয়। এ প্রক্রিয়া যত ব্যাহত হয়, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাও তত কমতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়লে তা হয়ে ওঠে হিট স্ট্রোকের কারণ। এমনকি সুস্থ-সবল মানুষও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা না গেলে তা হয়ে উঠতে পারে স্থায়ী বিকলাঙ্গতা বা মৃত্যুর কারণ। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোয় হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর প্রবণতাও বিশ্বের অন্যান্য অংশের চেয়ে বেশি দেখা যায়।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আগে গরমে ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখা গেলেও এখন তা ৪০-৪২ ডিগ্রি বা কোথাও কোথাও সেটিও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত রোগব্যাধিও বাড়ছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় আমাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি। দীর্ঘমেয়াদি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ঝুঁকিতে পড়ছে। বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে কেউ স্বস্তিতে নেই। এ অস্বস্তি শারীরিক জটিলতা বাড়ায়।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে কোনোভাবেই রোদে যাওয়া যাবে না। যাদের যেতে হবে তারা যেন শরীর ও মাথা ঢেকে যায়। স্বাভাবিক পানি পান বাড়াতে হবে। পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে পান করতে হবে। লেবু বা ফলের শরবত পান করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা যেন ভ্যাপসা বা অতি গরম না থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে। বাসি-পচা খাবার খাওয়া যাবে না। বাইরের তৈরি শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।

যশোরে প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তীব্র তাপপ্রবাহে জনশূন্য হয়ে পড়ে সড়কগুলো। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম, তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে।

রোদে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘সকলের উচিত সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা। এখন প্রচুর পরিমাণে সুপেয় পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন, দেশি ফলমূল খাওয়া উচিত। পচা ও বাসি খাবার যেন কেউ না খায়।’