৫দিন পর খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ মেরামত

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:৪১:০৮ পিএম

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা : ৫ দিন ধরে বালির জিও ব্যাগ দিয়ে ও বাঁশ, খুঁটি পুতে কাজ করার পর অবশেষে বুধবার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া দূর্গাবাটি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধটি রিংবাঁধ দিয়ে মেরামত করতে সক্ষম হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে লোকালয়ে নদীর তীব্র জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধ হলেও উপকূলবাসীর দুর্ভোগ এখনো কমেনি। এখনো বসতবাড়ির উঠান, আঙ্গিনা ও খাল-বিলে হাটু থেকে কোমর পানি জমে আছে। এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দূর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানির মধ্যে এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এলাকার টয়লেট গুলো পানিবন্দি থাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি চাপা পড়ে শাক সবজির ক্ষেত, ফসল ও গাছ-গাছালি মারা যাওয়ায় পঁচা দূর্গন্ধযুক্ত নোংড়া পানিতে চর্মবাহিত রোগসহ ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ছাগল, ভেড়া গরুসহ গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছে দূর্গতরা। এক ফোটা খাবার পানির জন্য মাইলের পর মাইল পথ যেতে হচ্ছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষকে। বেশি সংকটে পড়েছে পশ্চিম পোড়াকাটলা, পূর্ব পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দূর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, দাতিনাখালী ও কলবাড়িসহ আশে পাশের গ্রামের নিন্মাঞ্চলের মানুষ।

পুড়াকাটলা গ্রামের নমিতা হালদার ও সুনীতি রানী জানান, এলাকায় তীব্র খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাড়ির আঙিনায় বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়া গত কয়েক দিনের জমে থাকা পঁচা দূর্গন্ধ হাটু পানি ঠেলে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলস কাকে করে মুন্সিগঞ্জ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে লোকালয়ে আনতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন এনজিও ড্রাম ভর্তি করে এলাকায় পানি নিয়ে আসে। কিন্তু সেই পানিতে খাওয়া ছাড়া রান্না ও গোছলের জন্য কুলায় না। এ ফোটা সুপেয় পানির জন্য আমাদের গ্রামবাসীকে হাঁসফাস করতে হয়। 

দূর্গাবাটি গ্রামের রবিন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, খাবার পানি সংকটের পাশাপাশি ভেড়া, ছাগল ও গবাদিপশু নিয়ে মহা বিপদে আছেন। নিজেদের খাবারের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং নেতাদের নিকট থেকে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় তিন থেকে চার কেজি করে কিছু ত্রাণ সামগ্রী সহযোগিতা পেলেও গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। টাকা দিয়েও গরু-ছাগলের জন্য ঘাস ও বিচালি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।

পুড়াকাটলা গ্রামের রতœারানী জানান, বাঁধ মেরামত হলেও ঘর-বাড়ীর উঠানে এখনো নদীর লোনা পানি জমে আছে। ফলে প্রসাব-পায়খান করতে তাদের বসচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে। সুপেয়পানির পুকুর ও আধার নষ্ট হয়েগেছে। বাধ্য হয়ে লোনা পানি ব্যবহার করে শরীরে ঘাঁ-পাঁচড়া বের হয়েছে। এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি অধিকাংশ নারী ও শিশুদের ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। 

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের দেয়া তথ্য মতে, দূর্গাবাটি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৭০০ চিংড়ি ঘের, পুকুর ও কাঁকড়া খামার প্লাবিত হয়ে ৫০টি কাঁকড়ার খামার, ৯৬ মেট্রিকটন চিংড়ি, ভেটকি ও নানা প্রজাতির মাছসহ ১১৬ লক্ষ চিংড়ি পোনা ভেসে যায়। এতে এ অঞ্চলের ঘেরমালিক ও চিংড়ি ব্যবসায়ী ও কাঁকড়ার খামারিদের আর্থিক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। এতে কাঁকড়াচাষী ও মৎস্যঘের মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

ঊল্লেখ. গত ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূর্গাবাটি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ হঠাৎ প্রবল স্্েরাতে ২০০ ফুট এলাকা ভেঙে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম নিমিষেই প্লাবিত হয়।