এবার ভিজে ধানে চারা, যেন পাতো ক্ষেত

এখন সময়: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:২৯:৫৪ পিএম

এম আলমগীর, ঝিকরগাছা:ধান নিয়ে কৃষক এখন হতাশ। না পারছেন মাঠে ধান ফেলে আসতে, না পারছেন ঘরে তুলতে। ফলে মাঠেই পচছে ধান। পচে কল গজানোর পর চারাগাছ হয়ে উঠছে। যেন মনে হচ্ছে পাতো ক্ষেত। কৃষক আব্দুল জলিল কথা প্রসঙ্গে বলেন, ধান মাঠে ফেলে আসতেও পারছি না, আবার বাড়ি আনতে গেলে যে খরচ ধান বিক্রি করেও সে দাম হবে না। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এই কৃষক ধান করেছিলেন ৪বিঘা জমিতে। সব ধান এখন পানিতে। একটি ধানও বাড়ি আনতে পারেনি। প্রতিদিন মাথাপ্রতি সাড়ে সাতশ’ টাকায় শ্রমিক নিয়ে পানি থেকে ডাঙায় তুলছেন। ধানে রোদ না পেয়ে ইতিমধ্যে সকল ধান কল গজিয়ে গেছে। এই ধান খাওয়াও যাবে না, আবার বিক্রিও হবে না। কিন্তু আবার জমিতে ফেলে আসতে মন চাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ধানের চারা গজিয়ে গেছে।

কৃষক আব্দুল হক ঘোষণা দেন, তার জমির ধান যার ইচ্ছা সে কেটে নিয়ে যাক। পরিষ্কার করে অল্প কিছু দিলেই হবে। সেই ইউসুফ আলী নামের এক ব্যক্তি কেটে নিয়ে অর্ধেক দিয়েছে।

কৃষক মন্টু মিয়া বলেন, যারা কৃষক তারা খুব বিপদে আছে। যারা জনমুজুরি দেয়, তারা প্রতিদিন দুই হাজার টাকা আয় করছে কিন্তু যে কৃষক একা মানুষ তার লোকসান কিভাবে পূরণ করবে? ধান উঠলেই প্রতিটি দোকানে হালখাতা শুরু হবে। পাওনাদাররা বাড়িতে আসবে। দেনা দেব কিভাবে। এ লোকসান কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

প্রত্যেক কৃষকের মাঝে চলছে এমন হাহাকার আর হতাশা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ৭০ভাগ কৃষক তাদের ধান গোছাতে পারেনি। ক্ষেত্র বিশেষ কিছু জায়গায় ৯০ভাগ কৃষকের ধান মাঠে নষ্ট হয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছার প্রায় ৮০ ভাগ কৃষকের ধান নষ্ট হয়েছে। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এখনও ক্ষতির হিসাব করেনি।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের অধিকাংশ জমিতে ধান কাটা ছিল। টানা বর্ষণের ফলে রোদ না পেয়ে সেসকল ধান সব কল গজিয়ে গেছে। যে সমস্ত ধান কাটা হয়নি, তা মাটিতে পড়ে পানির মধ্যে তলিয়ে থাকার কারণে তাতেও কল বেরিয়ে গেছে। ফলে যে ধান পাওয়া যাবে তা সিদ্ধ করে চাল বানিয়ে খাওয়া যাবে না। আবর বিক্রয় হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে কৃষকের ইরি ধান পুরোটাই নষ্ট হয়েছে। এতে করে মারাতœকভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে তারা।

নিশ্চিন্তপুর, কানাইরালী, সোনাকুড়, দিঘড়ী, শিত্তরদাহ, সাদিপুর, বল্লা, হাজিরবাগ গ্রামের মাঠ ঘুরে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়। তাদের তথ্য মতে, কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের দেড় বিঘা, হাফিজা বেগমের ১২ কাঠা, ইজাজুল হকের দুই বিঘা, আব্দুস সাত্তারের দেড় বিঘা, সাইফুল ইসলাম বিল্লুর এক বিঘা, আক্তারুল ইসলামের ৫ বিঘা, সালিম হোসেনের ৬ বিঘা, মুরাদ হোসেনের ৩ বিঘা, মুকুল হোসেনের ২ বিঘা, মাস্টার মনিরুজ্জামান মিন্টুর ১৮ কাঠা, হাসানুর রহমানের ৫ বিঘা, আবু বক্কর ছিদ্দিকের ৫ বিঘা, আনারুল ইসলামের ২৪ কাঠা, মুজিবর রহমানের ২ বিঘা, মন্টু মিয়ার দেড় বিঘা, মিলন হোসেনের ২ বিঘা, গাজী গোলাম মোস্তফার ১০ কাটা জমির ধানে কল গজিয়ে গেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী এই এলাকার প্রায় ৯৫ ভাগ কৃষক বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের ধান কোন কাজে লাগবে না।

উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, আমরা এখনও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করিনি। আবহাওয়া এখনও ঝুঁকির মধ্যে আছে। প্রথমে কৃষককে দ্রুত ধান কাটার কথা বলেছিলাম কিন্ত বিচালীর জন্য তখন ধান কাটেনি। এখন বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। আমরা ধান কাটতে নিষেধ করেছি। আর যারা ধান কেটেছে তাদেরকে কাটা ধানে স্প্রে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি যাতে ধান অঙ্কুরিত না হয়। তিনি আরো জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগে কারও হাত নেই। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্যের চেষ্টা করব কিন্তু সেটা সংখ্যায় বেশি হলে কি হবে তা বলতে পারবো না।