ফুলতলায় বিপাকে কৃষক, পানিতে ভাসছে ক্ষেতের পাকা ধান

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:২৯:০১ এম

ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি: ফুলতলায় দুই দফা বৃষ্টিতে ক্ষেতের পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় দিন পার করছে কৃষকেরা। একদিকে শ্রমিক সংকট অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া যেন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান ঘুর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভাল হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়া ও ভারি বৃষ্টির কারণে চাষিরা চরম উৎকন্ঠায় পড়েছেন। এছাড়া শ্রমিক সংকটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। এই উপজেলায় ঈদের দুই সপ্তাহ আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করেছেন। এ সময় পুরো দমে ধান কাটার মৌসুম শুরু হলেও ২০ শতাংশ কৃষক ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারেনি। আর দুই এক সপ্তাহ সময় পেলে পাকা ধানগুলো কেটে ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকরা। একদিকে সপ্তাহ পার না হতেই ফের গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ মাঠের পাকা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে কেটে রাখা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এতে ধানের সঙ্গে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন।   

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, উপজেলার এ বছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। তেমনি ফলনও ভালো হয়েছিল। গত সোমবার থেকে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র কারণে যে বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে আইল কেটে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে সব ক্ষেতে ধান নুয়ে পড়েছে সে সব ক্ষেতের ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে ১০মে পর্যন্ত উপজেলার আবাদি জমির ২ শতাংশ ধান কাটতে বাকি থাকলে কাটা ধানের ১৫/২০ শতাংশ ধান বৃষ্টির এবং শ্রমিক সংকটের ঘরে তুলতে পারেনি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ৪২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৪১৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ২০ শতাংশ জমির ধান ঈদের কারণে বিভিন্ন এলাকার শ্রমিক সংকট আসতে না পারায় এবং তাদের মজুরি বেশি হওয়ায় সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেনি। 

৪৫ বছর বয়সী কৃষক মকবুল গাজী ১৮ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। শ্রমিক না পেয়ে সব ধান সময়মতো ঘরে তুলতে পারেননি।  জামিরা গ্রামের ওসমান গাজী বলেন, শ্রমিকের অভাবে এক বিঘে জমির ধান কাটতি পারিনি। দুই বিঘের ধান কেটেছি। বাড়ি আনতি পারিনি। মাঠে ধান ভাসছে। মশিয়ালী গ্রামের আজগর আলী পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বললেন, মাঠের ধান এখনও পুরো কাটা হয়নি। যা কাটা হয়েছে, মাঠেই পড়ে আছে। বৃষ্টি একদম শেষ করে দিল। কি করব এখন বুঝতি পারছিনে। একই গ্রামের কৃষক আ. জব্বার (৫০) বলেন, বৃষ্টিতে ধান তো গেছেই, সঙ্গে বিচালিগুলোও নষ্ট হয়ে গেলো। ধান বিক্রির পাশাপাশি বিচালিগুলো বিক্রি করতে পারলে লাভ একটু বেশি হয়। এখন বিচালিগুলো পঁচে যাচ্ছে।

জামিরা, ছাতিয়ানী, বাড্ডাগাতী, ধোপাখোলা, পিপরাইল, বসুরাবাদ, বেগুনবাড়িয়া, মশিয়ালী, বরণপাড়া, পাড়িয়ারডাঙ্গা, শিরোমনি, ডাকাতিয়াসহ কয়েক এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা তাদের জমি থেকে ধান তুলে রাস্তার ওপর রেখেছে শুকানোর জন্য। দ্রুত সময়ে তারা ধান ঘরে তুলতে ও ধান মাড়াইয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে ক্ষতি থেকে অনেকটা বাঁচবে। অনেক কৃষক তলানো ধান তুলে এনে আইলের পরে রেখেছে। আবার কিছু কিছু জমির ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কথা হয় কৃষক ডাউকোনা গ্রামের আনোয়ার সরদারের সাথে। তিনি বলেন, আমি এবার বোরোর আবাদ একটু দেরিতে করেছিলাম, যে কারণে ঘরে ধান তুলতে দেরি হচ্ছে। কিছু ধান ঘরে তুলেছি। বাকিগুলো তোলার সময়ে ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বসুরাবাদ গ্রামের প্রদ্যুৎ বিশ্বাস, বাবলু বিশ্বাস, জামিরার মান্নান গাজী, শাহাদাত শেখ, বাড্ডাগাতীর চাষি শামীম বিশ্বাস বলেন, অনেক খরচ করে বোরো আবাদ করেছিলাম। কিন্তু ব্লাষ্টের আক্রমণে কিছুটা ক্ষতি হওয়ার পর আবার ঘরে তোলার আগে ঘর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে আমাদের ধান তলিয়ে গেছে। ফলে ক্ষতিটা কিভাবে পোষাবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।