ধান ও সবজিতে সর্বনাশ

ঘূর্ণিঝড় অশনি : ছোট ‘তাণ্ডবে’ বড় ক্ষতি

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৪১:৪৬ এম

স্পন্দন ডেস্ক: পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ একই স্থানে অবস্থান করে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। এর প্রভাবে গত দুদিন ঝরছে বৃষ্টি। আগামী তিনদিন হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টিসহ বজ্রবৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিরও পূর্বাভাস রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় শুধু খেপুপাড়াতেউ ২০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। যা দেশের সর্বোচ্চ।  একই সময়ে যশোরে বৃষ্টি হয়েছে ১৯ মিলিমিটার। ঘূর্ণিঝড় অশনির বড় তান্ডব বাংলাদেশে হবে না আবহওয়ার পূর্বাভাসে তা আগেই বলা ছিল। কিন্তু ‘ছোট তান্ডব’ বৃষ্টিতেই সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। বর্তমানে দৃশ্যমান ক্ষতির চেয়ে ভবিষ্যতের হাহাকারের চিন্তায় হতাশ কৃষক। বৃষ্টির কারনে তলিয়ে আছে পাকা ধান, সবজিসহ অর্থকারী ফসল। ধান না হারালে কৃষককে হতে হবে ঋণী, থাকতে হবে অনাহারে। বিচালি নষ্ট হলে অনাহারে থাকবে গবাদী পশু। অর্থাৎ সবকূল হারানোর চিন্তা কৃষককে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে। অসময়ের বৃষ্টিতে ধান ও সবজিতেও সর্বনাশ ডেকে এনেছে কৃষকের। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের রিপোর্টে-

এম আলমগীর, ঝিকরগাছা থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে আকাশের বৃষ্টি যেন কৃষকের কান্না হয়ে নামছে। গোটা যশোর জেলার কৃষক গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে কাটা ধানের বিচালী নষ্ট হতে চলেছে। ধানের আটি কেটে বাড়ির নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালছে তবে এতে শেষ রক্ষা হচ্ছে না, ইতোমধ্যে ধানে কল গজাতে শুরু করেছে। ফলে ধানের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে তারা। এদিকে বৃষ্টির কারণে দিনমুজুর সংকট দেখা দিয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বাহন খরচ ও শ্রমিকের মুজুরি।

সরোজমিনে দেখা যায়, প্রচন্ড বৃষ্টিতে মাঠে কয়েক হাজার হেক্টর জমির কাটা ধান পানির উপরে ভাসছে এবং পাকা ধান যা কাটা হয়নি তা পানির সাথে মিশে রয়েছে। মঙ্গলবার বোর থেকে কৃষক মাঠে বাড়ির সকল সদস্য নিয়ে ধান বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বিচালী বাদে ধানের আগা কেটে শুধুমাত্র ধানগুলো নেয়ার জন্য কাজ করছে। পানির মধ্য থেকে রাস্তা বা উচু কোন জায়গায় রেখে ধান ঝেড়ে নিচ্ছে।

জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, কানাইরালী, সাদিপুর, হাজিরবাগ, সোনাকুড়, যুগিহুদা, দিঘড়ী, বাইশা ও শিত্তরদাহ, সাদিপুর, হাজিরবাগ, বল্লা, বাঁকড়া, বৃষ্টিপুরসহ জেলার সব জায়গায় একই অবস্থা। ধান বাাঁচাতে অনেক কৃষক বৃষ্টির মধ্যেও মাঠে গিয়ে ধান ডাঙ্গায় তুলেছে। আবার ক্ষেতের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য জমিতে আইল কাটতে এবং পানি সেচতে দেখা গেছে। সব কৃষকের মাঝে চরম হতাশা আর উৎকন্ঠা।

এসময় কথা হয় কৃষক আক্তারুল ইসলাম এর সাথে তার ১ বিঘা ২৫ কাঠা জমির ধান কাটা অবস্থায় পানির উপরে ভাসছে। আর ৩ বিঘা কাটতে বাকি আছে। তাও পানিতে ডুবে আছে। সালিম হোসেন ৬ বিঘা ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩ বিঘা কাটা আছে। মুরাদ হোসেনের ৩ বিঘা ধান কাটা আছে। মুকুল হোসেনের ২ বিঘা ধান কাটা আছে। মাস্টার মনিরুজ্জামান মিন্টুর ১৮ কাঠা ধান কাটা আছে। হাসানুর রহমানের ৩ বিঘা ধান কাটা ও ২ বিঘা কাটতে বাকি আছে। আবু বক্কর ছিদ্দিকের দেড় বিঘা ধান কাটা ও আড়াউ বিঘা কাটতে বাকি আছে। আনারুল ইসলামের ১৬ কাঠা কাটা ও ৮ কাঠা কাটতে বাকি আছে। মুজিবর রহমানের ২ বিঘা, মন্টু মিয়ার দেড় বিঘা, মিলন হোসেনের ২ বিঘা, গাজী গোলাম মোস্তফার ১০ কাটা জমির ধান কাটা আছে। তাদের সকলের সব ধান পানিতে তলিয়ে আছে।

এসময় নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম পানি থেকে ধান তুলতে তুলতে বলেন, ধান না হলে খাবো কি? ধান গোছাতে না পারলে সংসার চলবে কিভাবে? আল্লাহ যে কেন এত অরাযোগ দিচ্ছেন?

শাহিদা বেগম জানান, আমার ছেলে মুরাদ অন্যের কাছ থেকে ৩ বিঘা জমি লিচ নিয়ে ধান চাষ করেছে। ধান হোক বা না হোক জমির মালিককে লিচের টাকা দিতে হবে। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ধান চাষে খরচ করেছি। এখন আমরা কি করব? ধান ঘরে তোলা তো অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বৃষ্টির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ফলে বেড়ে গেছে শ্রমিকের মজুরি ও ধান বাহন খরচ। মাস্টার মনিরুজ্জামান মিন্টু জানান, গত দুই দিনে কোন শ্রমিক না পেয়ে নিজেই চলে এসেছি ধান ডাঙ্গায় তুলতে। আজকে ধান ডাঙ্গায় না তুললে পুরো ধানে গাছ বেরিয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে শ্রমিকের মুজুরি দিন প্রতি এক হাজার থেকে পনের শত টাকা। গরুর গাড়িতে ধান বহন খরচ ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার।

আব্দুল জলিল জানান, যে ধানগুলো আগে কাটা ছিল তাতে কল (গাছ) আসতে শুরু করেছে। ধানের যে অবস্থা তাতে কাদা-পানিতে ধানের সৌন্দার্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে কৃষক ধানের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম লোকসানের মধ্যে পড়বে।

আনোয়ার হোসেন নামে এক কৃষক জানান, এবার বিচালী করা যাবে না। কোনভাবেই ধানগুলো হয়ত বিচালী বাদে আটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। এজন্য বিচালী সংকট দেখা দিবে চরম আকারে। বিচালী কিনতে পাওয়া যাবে না এবং যা পাওয়া যাবে তার দাম থাকবে খুব বেশি।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিল্লাল হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় “অশনির” প্রভাবে বর্ষণের কারণে যশোরের অধিকাংশ সবজি ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে সবজি ক্ষেতের দিকে হতাশার চোখে তাকিয়ে আছেন চাষিরা। তারা বলেছেন সবজি চাষ করে লাভের স্বপ্নে যেনো বড় ধাক্কা দিয়েছে বৃষ্টি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টিতে সবজির ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিদিষ্ট করা হয়নি। জলমগ্ন ক্ষেত থেকে পানি সরিয়ে ফেলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কেননা ক্ষেত জলমগ্ন থাকলে শসা, মরিচ, পটল, বেগুনের সাথে গীষ্মকালীন শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপির ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিতে যশোর জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সবজির রাজ্য হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। জেলার মধ্যে এই তিন ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজির চাষ হয়ে থাকে। এবারও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে সাড়ে ৭শ’ হেক্টর, হৈবতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৫ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ৬শ’৯০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে।

কিন্তু  ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে  দুই দিনের বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ সবজি ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কৃষকেরা ক্ষেত থেকে পানি বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।

সবজি চাষি শাহিদুর রহমান, মিন্টু মিয়া, মাসুদুর রহমান জানান, ক্ষেত জলমগ্ন হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শসা, মরিচ ,পটল, বেগুনের সাথে গীষ্মকালীন শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপির। লাভের স্বপ্নে তারা বৃষ্টির ধাক্কা খেয়েছেন। তারা আরও জানান,

অল্প বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতের কোনো ক্ষতি না হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। দুই দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এতে সবজি গাছে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাবে। প্রতিটি ক্ষেতেরই আশি থেকে নব্বই শতাংশ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও আশেক মাহমুদ জানান, অনেক সবজি ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকেরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারপরেও সবজি ক্ষেত রক্ষা করার জন্য নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত  উপপরিচালক দীপঙ্কর দাস জানান, যশোর সবজির জেলা হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। জেলায় এবার ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়া ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে কৃষকদের দ্রুত সরানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এভাবে আরও দুই দিন বৃষ্টি হলে শসা, মরিচ, পটল, বেগুন ও গীষ্মকালীন শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপির ব্যাপক ক্ষতি হবে। কেননা এসব সবজির গোড়া পুরোটা পচে যাবে। বৃষ্টির ধাক্কায় সবজি চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতি হবেন।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি  জানান,  বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র  প্রভাবে দুপুর থেকে সাতক্ষীরায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মাঝে মধ্যে হালকা ও মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া বইছে। সেই সাথে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনা, রাইমঙ্গলসহ সকল নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্বি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ ও ২ এর অধিনে ৪৪ টি পয়েন্টের সাড়ে ৮’শ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে । ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলবাসী।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় “অশনি” মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ২৮৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমান শুকনা খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ পর্যাপ্ত সুপেয় পানি। এছাড়া উদ্ধার তৎপরতার জন্য ২ হাজার ৯৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং ৮৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ফিসিং বোর্ড এবং সকল ধরনের মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের নিরাপদে উপকূলে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরার আবহায়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনি সুন্দরবন থেকে ১ হাজার কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। সেটি ক্রমান্বয়ে উত্তর দিক থেকে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।  যা ভারতের অন্ধ প্রদেশে আঘাত আনতে পারে। তবে ঘুর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বাংলাদেশের অগ্রভাবে প্রবেশ করছে। তাতে করে যে কোনো সময় ভারি বৃষ্টি হতে পারে।

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি  জানান, ঝিনাইহের কালীগঞ্জে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’দফায় বৃষ্টিতে ক্ষেতের পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম হতাশায় পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে শ্রমিক সঙ্কট, অন্য দিকে বৈরী আবহাওয়া যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরিমধ্যে ক্ষেতে কেটে রাখা ধান এখন বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। তাইতো ধানের ফলন ও বাজার দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে চাষিরা পড়েছেন উৎকণ্ঠায়। এ ছাড়া শ্রমিক সঙ্কটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

এ উপজেলায় ঈদের ২-৩ দিন আগে থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়া কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। বৃষ্টি হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এ সময় পুরোদমে ধানকাটার মৌসুম শুরু হলেও এখনও অধিকাংশ কৃষক ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারেনি। আর ২-১ সপ্তাহের মধ্যে মাঠের পাকা ধানগুলো কেটে ঘরে তুলে নেয়ার অপেক্ষায় ছিল। এদিকে সপ্তাহ পার না হতেই ফের গতকাল সোমবার আবার বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নূইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এতে ধানের সঙ্গে ডুবেছে কৃষকদের স্বপ্নও।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ধানচাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৪ হাজার ৩০ হেক্টোর। কিন্তু কার্তিক মাসের কিছু ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৫শ’ ৭০ হেক্টোর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ হাজার ৫শ’ হেক্টোর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে বেশি। এরমধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মত বাড়িতে এনে পালা দিয়ে রেখেছেন আর গুলো ক্ষেতেই পড়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নূইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে জমে থাকা পানি কেটে রাখা ধানের ওপড়ে উঠে গেছে।

উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক জানায়, তার দেড় বিঘা জমির কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। পানি না থামাতে ধান ঘরে তুলতে পারছে না। এতে তার ব্যাপক ক্ষতি হবে।

উপজেলার জামাল ইউনিয়নের উল্ল্যা গ্রামের তৈয়েবুর রহমান জানান, এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে তার জমির পাকা ধান। একই এলাকার আরো অনেক কৃষক জানান, তাদের কিছু পরিমান ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন বাকি ধান পানিতে ভাসছে।        

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোহায়মেন আক্তার জানান, উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষমাত্রা চেয়ে বেশিই হয়েছে। তেমনি ভাবে ফলনও ভালো হয়েছিলো। সোমবার হতে বৃষ্টির কারণে যে সমস্ত বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে সে সমস্ত ক্ষেতের আইল কেটে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে। তা ছাড়া যেসব ক্ষেতে ধান নুয়ে পড়েছে সেসব ক্ষেতের ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। মাঠে গিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন হস্তান্তর করছি। যাতে করে কৃষকদের কষ্টে অর্জিত ফসল ভালভাবেই সংগ্রহ হবে।