মধু মাসের আগেই আমে ভরপুর

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:৪৪:৪৬ পিএম

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা : রং বে রঙের  নানা প্রজাতির আমে ভরপুর হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার বড়বাজার। মধু মাস জৈষ্ঠ আসার আগেই সাতক্ষীরার সুলতানপুরের বড় বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিশ্বমুক্ত গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই সহ সুস্বাদুু বিভিন্ন প্রজাতির দেশি আম। আবহাওয়ার আর মাটির গুণাগুণের কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে ভাগেই পাকে। জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আনুষ্ঠানিকতায় ৫ মে থেকে গাছ থেকে পরিপোক্ত পাকা আম পাড়া শুরু হয়েছে। এবছও সাতক্ষীরা বিশ্বমুক্ত সুস্বাদু ১০০ মেট্রিক টন আম রফতানি হবে ইউরোপের বাজারে। এজন্য সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনি এবং দেবহাটাসহ ৫ উপজেলার ৫শ’ আম চাষীকে আগে থেকে কৃষি সম্প্রসাধণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আম উৎপাদন করা হয়েছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ ঠিক থাকলে অচিরেই গোপালভোগ, হিমসাগর ও আমের রাজা ন্যাংড়া আম যাবে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইংল্যান্ডের বাজারে। 

এদিকে শহরের বড়বাজারে জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের আম বাগান থেকে  সকাল থেকে ভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহন যোগে আসতে শুরু করে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, ক্ষিরসরাই, বৈশাখীসহ নানা জাতের আম। ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় আম ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা আম কিনতে এসেছেন বড় বাজারের বিভিন্ন আড়তে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা বড় বাজারের মার্কেটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় আর কেনা-বেচায় গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে বড়বাজার আমের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মণ গোবিন্দভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১শ’ টাকা থেকে ২হাজার ৪শ’ টাকা দরে। গোপালভোগ ও খিরসরাই আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭শ’ টাকা থেকে ১হাজার ৯শ’ টাকা মণ দরে। আর দেশি আম বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১হাজার ২শ’ টাকা মণ দরে।

সাতক্ষীরা কাঁচা ও পাকামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, গত ২৭ মার্চ সরকারি কর্মকর্তা ও আম ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় জেলায় আম ভাঙার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেখানে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, ক্ষীরশরাই, গোলাপখাস ও বৈশাখিসহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের আম গাছ থেকে পাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ১৬ মে হিমসাগর, ২৪ মে ল্যাংড়া ও ১ জুন থেকে আ¤্রপালি আম ভেঙে বাজারে তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই মোতাবেক আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের বাজার মূল্যও অনেক ভাল। ঢাকা, খুলনা, চট্রগাম, নোয়াখালিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা আম কিনতে ভিড় করছে শহরের আমের সব চেয়ে বড় আড়ৎ বড় বাজারে। এছাড়া বিভিন্ন আম বাগান থেকে আম কিনে ট্রাক ভর্তি করে রাজধানী ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে চলে যাচ্ছে। 

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম জানান, এবছর জেলায় ৪ হাজার ১’শ ১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। পরিসংখ্যানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর জেলায় আমের ফলন খুব কম হয়েছে। ৫০ ভাগ গাছে মুকুল আসেনি। আমগাছে যখন মুকুল আসবে, ঠিক তার আগ মুহূর্তে শিলা বৃষ্টি ও ঝড় হওয়ায় মুকুল ঝরে গেছে। পরবর্তীতে গাছে কচি সবুজ পাতা চলে আসে। সে কারণে আমচাষিরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান এবছর সাতক্ষীরা থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, আম্প্রপালি, হিমসাগর ও ন্যাংড়া আমসহ মোট ১শ’ মেট্রিক টন আম ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রফতানি হবে। ইসলাম গ্রুপ, আর আর এন্টারন্যাশনাল, বুল বুল ভূইয়া করপোরেশন, গ্লোব ফুড এন্ড ব্যাভেরেষ্ট লিমিটেড কোম্পানিসহ বিভিন্ন বায়ার কোম্পানি পর্যায়ক্রমে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করবে।