শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির ২৭ মার্চ আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:১৭:২০ এম

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির। এ শক্তিপীঠটি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। যশোরেশ্বরী নামের অর্থ ‘যশোরের দেবী’। হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এ মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২৭ মার্চ পূজা দিতে আসবেন।

সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলে মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দে সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখণ্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং এ সকল স্থানসমূহ শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি পায়। ধারণা করা হয় যে, মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়। তিনি এই যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠের ১০০টি দরজা নির্মাণ করেন। কিন্তু মন্দিরটি কখন নির্মিত হয় তা জানা যায়নি। পরবর্তীকালে লক্ষণ সেন ও প্রতাপাদিত্য তাদের রাজত্বকালে এটির সংস্কার করা হয়েছিল। কথায় আছে যে মহারাজা প্রতাপাদিতর এখানকার জঙ্গল থেকে একটি অলৌকিক আলোর রেখা বের হয়ে মানুষের হাতের তালুর আকারের একটি পাথরখন্ডের উপর পড়তে দেখেন। পরবর্তীতে প্রতাপাদিত্য কালীর পূজা করতে আরম্ভ করেন এবং এই কালী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। যশোরেশ্বরী কালী দর্শনের নাম করে সেনাপতি মানসিংহ প্রতাপাদিত্যের দুর্গের নকশা নিয়ে যান। পরে আক্রমণ করে মোগলরা সেটি জয়লাভও করে। কালীর বিগ্রহের সঙ্গে প্রতাপাদিত্য এবং তার সেনাপতি ও পরামর্শদাতা শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে বন্দি করেন মানসিংহ।

জমিদার বাড়ির মধ্যে অবস্থিত ছিল। তৎকালিন জমিদার বাবু মায়ের নামে প্রায় ২শ বিঘা জমি দান করেছিলেন। মায়ের পূজায় সমবেত ভক্তগণ ফুল, ফল ও নানাধরনের মিষ্টি আনেন। মাতৃমূর্তির সামনে সুন্দর করে কাঁসার থালা ও মাটির পাত্রে থরে থরে নৈবেদ্য  সাজানো হয়। শ্রীযশোরেশ্বরীর পূজো তন্ত্রমতেও হয়। প্রতিবছর মন্দিরে খুব ধুমধাম করে শ্যামাপূজো হয়ে থাকে। মা ভীষণ জাগ্রত। শ্যামাপুজোয় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত পুজো দেন। মানত করেন। বড় করে মহাযজ্ঞ হয়ে থাকে। মাকে নানা অলংকারে সাজানো হয়। মন্দিরের সামনে তিনদিন মেলা বসে। ছাগল বলি হয়। মন্দিরের বারান্দায় হিন্দু ভক্তদের পাশাপাশি মুসলমান ভদ্রমহিলারাও মাকে ভীষণ মান্য করেন। মানত করতে আসে। মানত পূরণ হলে এক জোড়া পায়রা মন্দিরের বারান্দা থেকে উড়িয়ে দেয়া হয়ে থাকে। মূল মন্দির সংলগ্ন স্থানে নাটমন্দির নামে একটি বৃহৎ মঞ্চমন্ডপ নির্মাণ করা হয়েছিল যেখান থেকে দেবির মুখমণ্ডল দেখা যায়। এটি লক্ষণ সেন বা মহারাজা প্রতাপাদিত্য কর্তৃক ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু কারা এটি নির্মাণ করেছিল তা জানা যায়নি। ১৯৭১ সালের পর এটি ভেঙে পড়ে। সেই সুদৃশ্য, লম্বা-চওড়া বিরাট নাটমন্দিরের আজ কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই। এখন শুধুমাত্র স্থম্ভ গুলি দেখা যায়। দু-একটা স্থম্ভ কয়েক’শ বছরের নীরব সাক্ষী হয়ে ইটের পাঁজর বের করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো রকমে। একদা মন্দিরের চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর ছিল। মূল মন্দিরটি বাদে আর সবকিছুই আজ কালের গর্ভে বিলীন। মন্দিরের নওবতখানা এখন ভগ্নস্তুপ।। তবে এবার নতুন করে যশোরেশ্বরী কালী মন্দির নতুন রুপে সাজগোজ শুরু হয়েছে। প্রাচীন এই মন্দিরে পূজা দিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, আগামী ২৭ তারিখে নিজেই হাজির হবেন।