ঝিনাইদহে ব্রীজ পারাপারে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিককে হুমকি

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ , ২০২৪, ০৩:২৯:০২ পিএম

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : চাঁদা দিয়ে ব্রীজ পার হতে হয় সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকসহ ভ্যান চালকদেরও। সংবাদ প্রচার করায় সাংবাদিকের ওই সড়কে চলাচলে কতিপয় সন্ত্রাসী মোবাইল ফোনে একের পর এক দিচ্ছে হুমকি ও সড়কে চলাচলে দিচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি যেখানে পাবে সেখানেই শেষ করে ফেলবে বলে ফোনে একাধিকবার হুমকি দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা চেয়ে করা হয়েছে ঝিনাইদহ থানায় সাধারণ ডায়েরি। 
ঘটনাটি ঘটে গত ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার বেলা ১২ টার সময়। জানা যায়, ঝিনাইদহ শহর থেকে মোটরসাইকেল যোগে সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে নলডাঙ্গা বাজার সড়কের যাত্রাপুর ব্রীজ নামক স্থানে পৌঁছালে সড়কে বেঞ্চ ফেলে করা হয় গতিরোধ। পাশাপাশি গাড়ি প্রতি ২০ টাকা চাঁদা দাবি করে কতিপয় ব্যক্তি।
সেসময় কোনো ভাবেই চাঁদা না দিয়ে ব্রীজ পার হওয়া যাবে না বলে জানানো হয়। কথা বলাবলির এক পর্যায়ে তুমুল কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে প্রায় আঁধা ঘন্টা পর সেখান থেকে ছাড়া পায় ওই সাংবাদিক। সে সময় অনেক অসহায় মানুষের থেকে চাঁদা নিতে দেখা যায় ওই চক্রটির। পরবর্তীতে একটু সামনে এসে দেখা মেলে এক শিশু ভ্যানচালকের। 
সে নলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতার নাম সেলিম এবং তার নাম রাহুল বলে জানা যায়। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়–য়া এ শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে না গিয়ে পরিবারের কিস্তির টাকা জমানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে বাবার অটোভ্যান নিয়ে। সে সময় ভ্যানটিতে দুইজন যাত্রীও ছিল। 
জানা যায়, ভ্যানের যাত্রীর কাছ থেকে তার সর্বোচ্চ ভাড়া উঠবে ২০ টাকা। তার মধ্যে ২০ টাকা চাঁদা আদায়কারী চক্রটিকে দিলে তার অবশিষ্ট কি থাকলো এমন প্রশ্নের গুঞ্জন শোনা যায় যাত্রীদের মাঝে। এদিকে কালীগঞ্জের মল্লিকপুর থেকে মোটরসাইকেল যোগে ঝিনাইদহে আসা মা মনি ডিজিটাল প্রেসে কর্মরত জনি নামে এক ব্যক্তি জানান, তার কাছে খুচরা টাকা না থাকায় ১ হাজার টাকার নোট ভাঙ্গিয়ে ২০ টাকা আদায় করা হয়েছে। বিষয়টি লজ্জার। এছাড়াও পাশ্ববর্তী কোলা ইউনিয়নের দামোদারপুর গ্রাম থেকে আসা সাবেক চেয়ারম্যান ডা. নুরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র ঝিনাইদহ উকিল বারের সদস্য অ্যাড. তৌহিদুল ইসলাম সৌরভ জানান, এমন ভাবে বেঞ্চ আড় করে রেখে দেয়া হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। ব্যস্ততম এ সড়কটিতে এভাবে প্রতিবন্ধকতা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সড়কে সরকারের কোথাও কোন ব্রীজ কালভার্ট তৈরীতে রাস্তা অবরোধ করে এমন চাঁদা আদায় করা অন্যায়। এখানকার ঠিকাদার এবং স্থানীয় এ চক্রটির বিচার দাবি করেন তিনি।   
জানা যায়, ঝিনাইদহ এলজিইডির আরসি আইপি প্রজেক্টের আওতায় ছিল এ বক্স কালভার্টটি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রীজের কাজ চলাকালীন সময় সেখানে একটা বাইপাস রাস্তা তৈরী করে। কিন্তু বাইপাস রাস্তা উঠিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে ব্রীজের গ্যাপে কোনো মতে নরম মাটি দিয়ে চলে যাওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা যায়। চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয় ওই চক্রটি একটা শ্রমিক দিয়ে মাটি সমান ও মেরামত কাজ করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে শ্রমিকের মজুরির কথা বলে শুরু করে চাঁদা। এ সুযোগে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি সড়কে বেঞ্চ ফেলে উঠাতে থাকে গাড়ি প্রতি ২০ টাকা। 
এ ঘটনা নিয়ে তাদের সাথে সমাধানের জন্য চেষ্টা করার কথা বললে সাংবাদিককে পড়তে হয় ব্যাপক চাপের মুখে। বলা হয় এটির দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু কিছুতেই তা মানতে নারাজ। কে শোনে কার কথা।  সে সময় উচ্চ কন্ঠে প্রতিত্তরে বলা হয় আপনি ডিসটার্ব করবেন না, আপনার কাজে আপনি যান। এখানে ভিডিও ফিডিও করে কোন লাভ নেই বলে হুমকি দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টি অবগত করার কথা বললে যাত্রাপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে ঘটনাস্থলে চাঁদা আদায়কারী সুমন বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব এ রাস্তা দিয়ে আসেন না। আমরা বিশ টাকার পার্টি। আমাদের ডিসটার্ব কোরেন না। সে সময় একই গ্রামের নান্নু বিশ্বাসের ছেলে সোহাগ বিশ্বাস ও রমজান আলীর ছেলে জিল্লুর রহমান ও উপরে উল্লেখিত সুমনসহ বেশ কয়েকজন চাঁদা আদায়ের মূল ভূমিকায় ছিলো। তাছাড়া তাদের অতিক্রম করে বের হতে গেলে অনেকের সাথে লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। সে সময় অসহায় মানুষগুলোকে নিরুপায় হয়ে চাঁদা দিয়ে ব্রীজ পার হতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় ওই সংবাদকর্মী।
পরে সেখান থেকে বের হবার পর আনেকেই সংবাদকর্মীর কাছে অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কাজটি পরিপূর্ণভাবে করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নিয়ে অনেকটা অবহেলা করেছে। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের সহযোগিতা পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনেকটা প্রভাব বিস্তার ঘটায়। ফলে এলাকার সাধারণ জনগণ অনেকে চুপ থাকতে বাধ্য হয় বলে জানান এলাকার সুশীল সমাজের একাংশ। এরই ফলে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি ফুঁসে ওঠে এবং স্থানীয় অপর পক্ষটি সড়কে চাঁদা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যার প্রভাবপড়ে অসহায় ও সড়কে চলাচলকারী ব্যক্তিদের মাঝে। 
বিষয়টি নিয়ে সংবাদকর্মী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে অবগত করার চেষ্টা করা হলে সেখানেও বাধার সৃষ্টি করে অতি উৎসাহী জনতা। উত্তেজিত জনতার সামনে কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের সাথে। তাকে ব্রীজের গ্যাপে মাটি পরিপূর্ণ না দেয়ার কারণ এবং যার ফলে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে মর্মে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদা আদায়ের কোনো প্রশ্নই আসেনা। আমি মহেশপুরে আছি। কাছাকাছি জায়গায় থাকলে তিনি ঘটনা স্থলে আসতেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, আমি মাসুম মিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। আমার নাম সবুজ।
এ ব্যাপারে জেলা এলজিইডি প্রোকৌশলী মনোয়ার উদ্দিনকে একাধিক বার মোবাইল নম্বরে ফোন কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 
এ ঘটনায় সংবাদ প্রচার করা হয়। কিন্তু পরদিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সকাল থেকে সাংবাদিকের উপর শুরু হয় বিভিন্নভাবে হুমকি। এমনকি ৩টি মোবাইল নম্বর থেকে দেয়া হয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, শেষ ফোন কল দিয়ে  ওই চাদাঁবাজ চক্রের মূল হোতার সাথে কথা বলতে বলা হয়। তিনি তার কথায় নিজেকে ভয়ংকর কিলার প্রমাণ করতে চাই। অবশ্য তিনি তার কথাই এখনও সংবাদ কর্মীকে খুঁজছে বলে জানায়। তাছাড়া একাধিক ফোন কলে হুমকির পাশাপাশি ওই রাস্তা দিয়ে সংবাদকর্মীকে চলাচলে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। পরে বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানাকে ওই সাংবাদিক অবগত করলে তিনি সাধারণ ডায়েরি করতে বলেন এবং বিষয়টি তিনি তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগভাবে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন।