বাঘারপাড়ার ৮ ইউপি চেয়ারম্যানকে শ্রেষ্ঠ করা নিয়ে প্রশ্ন ?

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৬:২০:১৩ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘারপাড়া : বাঘারপাড়ায় নয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে আটজনই যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এমন খবর বাঘারপাড়াবাসীকে অবাক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসা কারা শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করলো? কিভাবে এক উপজেলার ৮জন চেয়ারম্যান জেলায় শ্রেষ্ঠ হলো? জানা গেছে অন্য উপজেলাগুলোতেও এ ধরনের একাধিক চেয়ারম্যান জেলার শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। বিষয়টি আজব মনে হলেও গুজব নয়, সত্যি।  বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি প্যাড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান এতজনকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করে চিঠি দিয়েছে। জেলার অধিকাংশ চেয়ারম্যানই চিঠি পেয়েছেন। এদের মধ্যে যারা প্রচারে পটু তারা আহ্লাদিত হয়ে তড়িঘড়ি প্রচার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। ‘সবাই সেরা’ হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে অনেকেই লজ্জায় চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন আবার কেউ কেউ যাচাই না করে কোনো কিছু বলেননি। 
বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আপনি যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আপনার জীবনের সকল ক্ষেত্রে সততা, ন্যায় নিষ্ঠার সাথে সামাজিক ও সমাজ সেবায় জনগণের মাঝে বিশেষ ভূমিকা ও অবদান রেখেছেন এবং বিজয় ও সাফল্য অর্জন করেছেন। আপনার এই বিজয় অর্জনের জন্য সততার মূল উপহার হিসাবে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাছাই পর্বে আপনাকে যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসাবে ’মহান স্বাধীনতা পদক ও বিজয় পদক ২০২২’ পদকে ভুষিত করা হয়েছে।’ 
যারা এবারই নতুন নির্বাচিত হয়েছেন তাদের একজন এমন একটি চিঠি পেয়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। চারিপাশে তার সমর্থক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে দেন। বিষয়টি জানাতে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদেরও তিনি বাদ রাখেননি। কেউ কেউ অনলাইন পোর্টাল ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদও ছাপিয়ে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে উপজেলা সদরে যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এক জায়গায় হয়েছেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ সময় ঐ চেয়ারম্যান জানতে পারেন আরো সাতজন চেয়ারম্যানকে ঐ একই চিঠি দেয়া হয়েছে। তখন হাওয়া ভর্তি বেলুন ফুটো করে দিলে যে অবস্থা হয় ঐ চেয়ারম্যানের অবস্থাটায় তদ্রুপ হয়েছে। 
বাঘারপাড়ার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তিব্বত জানিয়েছেন, তিনিও একটি চিঠি পেয়েছেন। তার চিঠিতেও একই কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থা থেকে চিঠি পেয়ে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন। এ পর্যন্তই তিনি সীমাদ্ধ থেকেছেন। এর আগেও তিনি একটি সংস্থা থেকে চিঠি পেয়েছিলেন। সে সংস্থাটিও তাকে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যানের খেতাব দিতে চেয়েছিলো। এক সময় রেজিষ্ট্রেশনের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে। যে কারণে তিনি আর ঐ খেতাব নেননি। আরিফুর রহমান তিব্বত হাসতে হাসতে বলেন ঐ একই কেস বলেই আর লাফালাফি করিনি।
দরাজহাট ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানিয়েছেন, তিনিও একই চিঠি পেয়েছেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে বলেই বিষয়টি আর কাউকেই বলিনি। তবে তারকাছে জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন বিষয়টি কি। তিনি তাকে বলেন, কোনো কিছুই করার দরকার নেই, চুপ করে থাকো।
ছয় বারের নির্বাচিত রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন জানিয়েছেন, আমিও পেয়েছি। জীবনে বহুবার পেয়েছি। একটাতেও যাইনি। ও সব ধান্দাবাজ। চেয়ারম্যানগিরির বয়স এখনও ছয়মাস পার হয়নি, তিনি আবার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হচ্ছেন! তাও আবার এক উপজেলায় আটজন! 
বন্দবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান জানিয়েছেন, আমিও বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার চিঠি পেয়েছি। এর আগেও এরকম বিভিন্ন সংস্থার চিঠি পেয়েছি। কোথাও পদক নিতে যাইনি। 
দোহাকুলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার জানিয়েছেন, তিনি বাদে বাকি আট চেয়ারম্যানই বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার চিঠি পেয়েছেন। এসব সংস্থা হচ্ছে ধান্দাবাজ। 
বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চিঠির সাথে যে ফরমটি দেয়া হয়েছে তা আগামী ৩০/০৪/২২ তারিখের মধ্যে পূরণ করে সংস্থার দপ্তরে পাঠাতে হবে। আর পদক বিতরণের দিন প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় সন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি। অন্যান্যের মধ্যে থাকবেন, সাবেক মন্ত্রী আমির হোমেন আমু, এমপি মমতাজ বেগম, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল প্রমুখ। 
বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী সাক্ষরিত এ চিঠিতে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে মুক্তি ভবন (৩য় তলা), সেগুন বাগিচা, ঢাকা। 
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর সাথে মোবইলে(০১৯৪২৭৮৫৬৫০) কথা হলে তিনি জানান, তারা ডিজিএফআই ও এনএসআই এর মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশে হাজার হাজার চেয়ারম্যান রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে আমরা মাত্র একশ চেয়ারম্যানকে শ্রেষ্ঠত্বের পদক দিচ্ছি। এক উপজেলায় নয়জন চেয়ারম্যানের মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান কিভাবে শ্রেষ্ঠ হয় এমন প্রশ্ন করলে তিনি কথা ঘুরিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।