স্ট্রোকে শয্যাশায়ী মা, বিদ্যুৎ মিস্ত্রি বাবার সাধ্য নেই

চান্স পেয়েও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে শঙ্কায় সুরাইয়া জান্নাত সেতু

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৫৯:৩৫ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘারপাড়া : মেডিকেলে ভর্তি সুযোগ পেয়েছেন মেধাবী ছাত্রী সুরাইয়া জান্নাত সেতু। ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। স্বপ্ন পূরণে আরো একধাপ এগিয়েও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না সেতু। মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সেতু। তবে অর্থাভাবে তার ভর্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। শুধু ভর্তি নয়  ভর্তি পরবর্তী ব্যয় নির্বাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সেতু।

সুরাইয়া জান্নাত সেতু যশোরের বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে। পেশায় তার বাবা একজন বিদ্যুত মিস্ত্রী। বাবা ছাড়া পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। এদিকে বসত বাড়ির জায়গা ছাড়া নেই তেমন কিছু। 

সেতু ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তিনি খানপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নারিকেলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া সেতু পিএসসি ও জেএসসি তে জিপিএ-৫ নিয়ে বৃত্তি পান। ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করেছেন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না সেতু। কৃতিত্বের সাথে সব ধাপে ভালো ফলাফল অর্জন করলেও তার সেই স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।

কোথায় পাবেন এতো অর্থ, কে দেবেন অর্থের জোগান-এ শঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সেতুর। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেতুর পিতার। এদিকে, দীর্ঘকাল ধরে স্ট্রোক করে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে আছেন সেতুর মা। তার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতেই হিমসিম খেতে হয় সেতুর পিতাকে। মেয়ের   মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য দরিদ্র পিতার নেই।

সেতুর পিতা আব্দুল খালেক বলেন, স্থানীয় এনজিও থেকে লোন নিয়ে একটি ঘর করি। সেই লোনের কিস্তি দিতে হয়। এর পরে সেতুর মায়ের ওষুধপত্রসহ কোনোরকম কষ্টে পরিবারের ৩জনের মুখের আহার তুলে দেয়া ও সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। তাই সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে মেয়ের মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার কাছে দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি আমার মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারবো কিনা জানি না। 

সেতু জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় অর্থের অভাবে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব বই কিনতে পারতাম না। একটা একটা করে বই কিনতাম। মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন, আমি তাতেই খুশি থাকতাম।

সেতু আরও বলেন, মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। মেডিকেলের বইয়ের দাম বেশি। ঢাকায় পড়াশুনা করতে গিয়ে সেখানে থাকা-খাওয়াসহ অনেক খরচ হবে। এত টাকা আমার হতদরিদ্র বাবা কোথায় পাবে? কীভাবে পড়ালেখার খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। আমার বাবার পক্ষে সেই খরচ চালানো সম্ভব না।

সেতু সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চান। সবার সহযোগিতায় পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে যেতে চান সেতু ।

নারিকেলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মিহির সাহা জানান, সেতু দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও সে অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানরা নজর দিলে সেতুর ডাক্তারি পড়া আটকাবে না।